সম্পাদকীয়
শব্দ মিছিলের সম্পাদক ও কবি সাকিব শাকিল হুট করে একদিন প্রস্তাব দিলেন অতিথি সম্পাদক হওয়ার। ঘুম থেকে উঠে এমন মেসেজ দেখে বিস্মিত তন্দ্রা তন্দ্রায় তারে জিজ্ঞাসা করলাম 'এইডা কেমনে করে?'
পরে উঁনি জানালেন, আমার প্রিয় পাঁচ কবির ৩ টি করে কবিতা ফিচার করতে হবে সাথে একটা সম্পাদকীয়। এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি দেখেই আমি প্রস্তাবটা অভিজ্ঞতার জন্য গ্রহণ করলাম। তো কবিতা সংগ্রহ করা কোনো ব্যাপার ছিল না বাট সম্পাদকীয়টা যে লিখবো, নানান ব্যক্তিগত কারণে সেটাতে বিলম্ব হচ্ছিলো।
তো আমার বেশ কিছু পছন্দের কবির মধ্যে পাঁচজন সিলেক্ট করা কঠিন ছিলো। তাদের মধ্যে এই সংখ্যায় যারা আছেন
ইহিতা এরিন
মোহাম্মদ জসিম
অর্ক অপু
তানিয়া হাসান
নৈরিৎ ইমু
পাঁচ সংখ্যাটা বুধের সংখ্যা। শক্তিশালী এবং শুভ। সংখ্যাটা লেখালেখি এবং যোগাযোগেরও। কবির সাথে কবিতার যোগাযোগ হলো সাধকের সাথে সাধনার। এখন কথা হলো, এই সাধনার শুরু কবে?
এই প্রশ্নটি ভাবতে গিয়ে ইহিতা-তরঙ্গে প্রথম সমর্পণে গিয়ে দেখি, তার নাম কিভাবে বদলে যাচ্ছে 'হি হি তা'য়, আত্মসাধনার কোনো এক উপহাসের প্রেমে পড়ে। শাদা বামনের ছায়ায় যে আমাদের তরঙ্গতত্ত্ব শুনতে বলে, সে নিজে সেই তত্ত্ব শিখে নিয়ে তারপর তত্ত্বত্যাগে খুলেছে 'জলের মাদল', চর বিজয়ের সমূহ ধাপ। ত্যাগ, উপহাস, বিজয়-- এতো এতো ধাপে প্রবাহের মিঠা দংশনে আমরা ভাবতে ভুলে যাই আসলে শুরু কই। কোনো শুরু যেন নেই৷ কবি যখন লেখেন, তখনই যেন শুরু। অথচ তখন শুরু ছিলো না। এ যেনো ডিম ফাঁটার আগের ঘটনাসমূহে আমাদের কুসুম কুসুম অন্ধত্বের আঠালো নড়ে নড়ে ওঠা। সে কুসুম একটু মাইক্রোস্কোপে দেখতে চাইলে 'কত কত মনোভঙ্গিমা' যে হায় সাধন ছেঁড়া শক্ত শক্ত রুটি চাবায়!
প্রশ্নটি দ্বিতীয় ঢোক গেলায় স্থির দাঁড়ালে অবলোকন করি, আত্মপ্রেমধ্যান যেন এক হ্যালুসিনেশন।'নিজের কপালে চুমু' খাওয়াও হ্যালুসিনেশন। হ্যালুসিনেশনকে কি সাধনা বলা যায়? নাকি কবিরা জীবনের সমস্ত হ্যালুসিনেশনের দোকান থেকে কলম কিনে সাধনার বুক খোঁচাতে থাকেন? আবার সে সাধন হয়ে ওঠে শৃঙ্গার, কবিতা লেখার শতবর্ষ পূর্বে মেয়েলোক থেকে শুরু করে যখন সমস্ত লৌকিক অলৌকিক অস্তিত্ব প্রত্যাখানে, যখন পৃথিবীকে শৃঙ্গার করতে চাওয়া হলো, হয়তো সেই কলমই তার সাধনা কিংবা হ্যালুসিনেশনের পদোন্নতিতে হয়ে উঠিলো আস্ত একটা সুইঁগাছ, রক্ত রক্ত হ্যালুসিনেশনে বুঝে উঠি, এ হয়তো হাজারো শৃঙ্গার কিংবা শৃঙ্গারহীন মহাকাল পেরিয়ে আসা সাধন, যাকে এখন আমরা কবিতারূপে অবলোকন করতে পারছি। কিন্তু আমরা সেই শুরুটা খুঁজে পাই না। হ্যালুসিনেশন রূপান্তরিত হয় 'ডার্ক হ্যালুসিনেশন'-এ।
তৃতীয় থেমে যাওয়ায় যে 'রু বাড়ির ফুলে' অভ্যর্থনা পেলাম যীশু-কাগজে ভরা এক রাফখাতার গন্ধে। এ বাড়ির খবর নাইলে আমরা আজ পেয়েছি, কিন্তু এই যে রু বাড়ির নিচ থেকে যীশুর মিসকল আসছে, সে শব্দও আমরা এখন শুনছি। কিন্তু আসলে মিসকল এসেছিলো কবে? ধর্মতত্ত্বের জাবর কাটতে কাটতে দপ্তরির বুকের পতাকায় পৌঁছানোর যে লো ভলিউমে রবীন্দ্রসংগীত চলে, এসব যাপন কি সাধনা? এসব যাপন কি তবে সাধনের মুদ্রায় নৃত্য করে করে কবিতা হলো? নাকি এসব শুরু থেকেই কবিতা, যার আসল রচনা থেকে শুরু করে কবির কলমে আসা পর্যন্ত আমরা মিসকলের সাধনা করে যাই। এই মিসকল আসার কত কত মহাকাল আগে আসলে রু বাড়ির ফুল ফুটেছিলো, তার হদিস পাওয়া যাবে না বলে আমরা কেবল কবির বুকের পতাকায় নিজেদের গলা প্যাচায়ে হাই ভলিউমে রবীন্দ্রসংগীত নিজেরাই গাই
সাধনের অনির্ণেয় ভাসমান দেখতে দেখতে চতুর্থ স্রোতে এখানেও একটা প্যারাসিটামল ভেসে এলো। আমি গিললাম আর আগুন ধরা সিসি ক্যামেরার সামনে তুলে ধরলাম ফায়ার সিলিন্ডার। এখন প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরায় আগুন কেনো ধরলো? যেহেতু আমি সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিং চেক করতে গিয়ে খুঁজে চলেছি-- সিসি ক্যামেরা আবিষ্কারেরও আগের কোনো 'গ্যালারী বা সিঁড়ির ঝংকার', 'কি জানি কি মূর্ছনায়!' প্রেমিকের নিঃশ্বাসে হরিণের বারবিকিউ হওয়ার যে লোভনীয় ঘ্রাণ ধরা পড়ে, তা আমাদের কাছে আসলে 'গতকালের ইতিকথা'। এই 'গতকাল' আসলে কতোকাল আগের? যেসব গত ঘ্রাণ থেকে শুরু করে গতরে নেমে যায়, রয়ে যায়, যার একটার পর একটা সিকুয়েন্স চরম উত্তেজনার সাথে পাঠক সমাজ গিলে ঠিকই কিন্তু সিকুয়েন্স তৈরি হওয়ার কাহিনী 'বেসামরিক রাতে জবাই' হয় ধুমধাম। উফ, এসব প্রবাহে সেই শুরুরও আগের শুরুর একটা 'জ্যান্ত উড়াল' বিব্রত করে খুলে রেখে দেয় 'চোখের পেখম'।
অক্ষরের শেষ অবশগুলোয় অবশ্য সাধনের আরেক প্রকৃত শুরুর মারদাঙ্গা ডাকাডাকি। এমন পঞ্চম লহরের নৈরিৎ-এ দাঁড়িয়ে যখন ভুলে যেতে চাই সবকিছু, তখন আবার পঞ্চমীর উসকানি টেনে ধরে বিভ্রম কিংবা প্ররোচনায়-- 'বোধ হয় কোথাও যাচ্ছিলাম'। আবার সেই ভ্রমণ এবং স্থানত্যাগ-- মীনদেশ, সরিসৃপ অঞ্চল কিংবা আদিম গুহার গন্ধে রুচির প্রস্থান এবং গুপ্তধনের উপর বানানো রাস্তার মাজেজায় পা ঘষতে ঘষতে ভ্রমণের নতুন ম্যাপ বানানো। সেই সাথে 'তিনশ বছর ঘুমিয়ে থাকা সাপের' কাছে তার জন্মদিন নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ, আর সেই চির ঘুমন্ত সাপের সামান্য নড়ে ওঠায় নতুন ম্যাপে মুখ গুঁজে শুরু হয় তিনশ মহাকাল আগের এক অস্তিত্ববাদীর যোগাসন, যাতে বুঝি কেঁপে ওঠে 'অদেখা আরশ শব্দ করে।' সমস্ত ধ্যান পেরিয়ে পৌঁছে যাই 'আজাজিলের বাগানবাড়ি'তে, যেখানে দ্রাক্ষারসের আহবানে অস্তিত্ববাদীদের বুঝানো হয়, অস্তিত্বের কেমন সংকটে ধ্যানের আদিম থেকে আদিমতর সিঁড়িগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয় ইন্দ্রিয়মূলক।
তাও ধ্যানের ভবিষ্যতে দুলে ওঠে 'পরজন্মের ইতিকথা'। মানলাম, সবই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে-- এই শুরুহীন শেষহীন ধাপে ধাপে একজোট। তবুও যা খুঁজে চলি, ভেবে ভেবে খুঁজি কবির সাধন, সাধনের সেই শুরু কিংবা 'শৃঙ্গার', শব্দ নাযিল কিংবা শব্দ জন্ম নেওয়ার আগের যতো 'মেঘমল্লার রাগ ও বিপন্ন পদাবলী'র মাঝে নৃত্য-কামনা, কবিদের প্রথম আদর্শলিপি পাঠ দেখতে চাওয়ার সাথে সাথে যে যীশু আসলে 'নগরদণ্ডের রাফখাতা', তা চুরি করার একটা পায়তারা করতে করতে 'খাঁ খাঁ শব্দের কোলাহলে ঘেমে যাওয়া'। এই খাঁ খাঁ যেন আসলে বলে -- খা খা, শব্দের ভুলভুলাইয়া গলিগুলোর মাঝে নিজের দানা দানা মগজ পচায়ে মদ খা। খেয়ে খেয়ে 'ডার্ক হ্যালুসিনেশন'-এর পাল্লায় পাগল পাঠক তুই ঘুরঘুর কর 'পোষা কুকুরের মতো নির্ভয়ে'।
এই ঘুরঘুর করাকে কিন্তু আসলে বলাই যায়–
'জর্জর তবু আলোর ঝিল্লি ঢাকা
খুঁজতে চাইছো এমন আইভি লতা!'
এ্যালেইনা হোসেন
শ্যামলী, ঢাকা
তো আমার বেশ কিছু পছন্দের কবির মধ্যে পাঁচজন সিলেক্ট করা কঠিন ছিলো। তাদের মধ্যে এই সংখ্যায় যারা আছেন
ইহিতা এরিন
মোহাম্মদ জসিম
অর্ক অপু
তানিয়া হাসান
নৈরিৎ ইমু
পাঁচ সংখ্যাটা বুধের সংখ্যা। শক্তিশালী এবং শুভ। সংখ্যাটা লেখালেখি এবং যোগাযোগেরও। কবির সাথে কবিতার যোগাযোগ হলো সাধকের সাথে সাধনার। এখন কথা হলো, এই সাধনার শুরু কবে?
তৃতীয় থেমে যাওয়ায় যে 'রু বাড়ির ফুলে' অভ্যর্থনা পেলাম যীশু-কাগজে ভরা এক রাফখাতার গন্ধে। এ বাড়ির খবর নাইলে আমরা আজ পেয়েছি, কিন্তু এই যে রু বাড়ির নিচ থেকে যীশুর মিসকল আসছে, সে শব্দও আমরা এখন শুনছি। কিন্তু আসলে মিসকল এসেছিলো কবে? ধর্মতত্ত্বের জাবর কাটতে কাটতে দপ্তরির বুকের পতাকায় পৌঁছানোর যে লো ভলিউমে রবীন্দ্রসংগীত চলে, এসব যাপন কি সাধনা? এসব যাপন কি তবে সাধনের মুদ্রায় নৃত্য করে করে কবিতা হলো? নাকি এসব শুরু থেকেই কবিতা, যার আসল রচনা থেকে শুরু করে কবির কলমে আসা পর্যন্ত আমরা মিসকলের সাধনা করে যাই। এই মিসকল আসার কত কত মহাকাল আগে আসলে রু বাড়ির ফুল ফুটেছিলো, তার হদিস পাওয়া যাবে না বলে আমরা কেবল কবির বুকের পতাকায় নিজেদের গলা প্যাচায়ে হাই ভলিউমে রবীন্দ্রসংগীত নিজেরাই গাই
সাধনের অনির্ণেয় ভাসমান দেখতে দেখতে চতুর্থ স্রোতে এখানেও একটা প্যারাসিটামল ভেসে এলো। আমি গিললাম আর আগুন ধরা সিসি ক্যামেরার সামনে তুলে ধরলাম ফায়ার সিলিন্ডার। এখন প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরায় আগুন কেনো ধরলো? যেহেতু আমি সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিং চেক করতে গিয়ে খুঁজে চলেছি-- সিসি ক্যামেরা আবিষ্কারেরও আগের কোনো 'গ্যালারী বা সিঁড়ির ঝংকার', 'কি জানি কি মূর্ছনায়!' প্রেমিকের নিঃশ্বাসে হরিণের বারবিকিউ হওয়ার যে লোভনীয় ঘ্রাণ ধরা পড়ে, তা আমাদের কাছে আসলে 'গতকালের ইতিকথা'। এই 'গতকাল' আসলে কতোকাল আগের? যেসব গত ঘ্রাণ থেকে শুরু করে গতরে নেমে যায়, রয়ে যায়, যার একটার পর একটা সিকুয়েন্স চরম উত্তেজনার সাথে পাঠক সমাজ গিলে ঠিকই কিন্তু সিকুয়েন্স তৈরি হওয়ার কাহিনী 'বেসামরিক রাতে জবাই' হয় ধুমধাম। উফ, এসব প্রবাহে সেই শুরুরও আগের শুরুর একটা 'জ্যান্ত উড়াল' বিব্রত করে খুলে রেখে দেয় 'চোখের পেখম'।
অক্ষরের শেষ অবশগুলোয় অবশ্য সাধনের আরেক প্রকৃত শুরুর মারদাঙ্গা ডাকাডাকি। এমন পঞ্চম লহরের নৈরিৎ-এ দাঁড়িয়ে যখন ভুলে যেতে চাই সবকিছু, তখন আবার পঞ্চমীর উসকানি টেনে ধরে বিভ্রম কিংবা প্ররোচনায়-- 'বোধ হয় কোথাও যাচ্ছিলাম'। আবার সেই ভ্রমণ এবং স্থানত্যাগ-- মীনদেশ, সরিসৃপ অঞ্চল কিংবা আদিম গুহার গন্ধে রুচির প্রস্থান এবং গুপ্তধনের উপর বানানো রাস্তার মাজেজায় পা ঘষতে ঘষতে ভ্রমণের নতুন ম্যাপ বানানো। সেই সাথে 'তিনশ বছর ঘুমিয়ে থাকা সাপের' কাছে তার জন্মদিন নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ, আর সেই চির ঘুমন্ত সাপের সামান্য নড়ে ওঠায় নতুন ম্যাপে মুখ গুঁজে শুরু হয় তিনশ মহাকাল আগের এক অস্তিত্ববাদীর যোগাসন, যাতে বুঝি কেঁপে ওঠে 'অদেখা আরশ শব্দ করে।' সমস্ত ধ্যান পেরিয়ে পৌঁছে যাই 'আজাজিলের বাগানবাড়ি'তে, যেখানে দ্রাক্ষারসের আহবানে অস্তিত্ববাদীদের বুঝানো হয়, অস্তিত্বের কেমন সংকটে ধ্যানের আদিম থেকে আদিমতর সিঁড়িগুলো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয় ইন্দ্রিয়মূলক।
তাও ধ্যানের ভবিষ্যতে দুলে ওঠে 'পরজন্মের ইতিকথা'। মানলাম, সবই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে-- এই শুরুহীন শেষহীন ধাপে ধাপে একজোট। তবুও যা খুঁজে চলি, ভেবে ভেবে খুঁজি কবির সাধন, সাধনের সেই শুরু কিংবা 'শৃঙ্গার', শব্দ নাযিল কিংবা শব্দ জন্ম নেওয়ার আগের যতো 'মেঘমল্লার রাগ ও বিপন্ন পদাবলী'র মাঝে নৃত্য-কামনা, কবিদের প্রথম আদর্শলিপি পাঠ দেখতে চাওয়ার সাথে সাথে যে যীশু আসলে 'নগরদণ্ডের রাফখাতা', তা চুরি করার একটা পায়তারা করতে করতে 'খাঁ খাঁ শব্দের কোলাহলে ঘেমে যাওয়া'। এই খাঁ খাঁ যেন আসলে বলে -- খা খা, শব্দের ভুলভুলাইয়া গলিগুলোর মাঝে নিজের দানা দানা মগজ পচায়ে মদ খা। খেয়ে খেয়ে 'ডার্ক হ্যালুসিনেশন'-এর পাল্লায় পাগল পাঠক তুই ঘুরঘুর কর 'পোষা কুকুরের মতো নির্ভয়ে'।
এই ঘুরঘুর করাকে কিন্তু আসলে বলাই যায়–
খুঁজতে চাইছো এমন আইভি লতা!'
শ্যামলী, ঢাকা
0 Comments