রোলার কোস্টার থামার পর ও অন্যন্য কবিতা || তানহিম আহমেদ

 


রোলারকোস্টার থামার পর 

রাইড শেষ, দোলা থেকে যাবে
ব্যান্ডেজে মোড়া জরা ভুলে থাকা যাবে
ওলাবিবি উঠে এসেছিলো
রেড-রুমস ফেরতা ক্ষত-বিক্ষত মৌনী মেয়েটিও
ওরা কবেই নেমে গেছে
 
তারপর লাল ধান, কালো ধান
আর্মাডিলো থেকে বিবর্ণ পিঁপড়া ছাড়ানো
 
শার্টের বুক-বোতামে ফুল এঁটে
প্রতিটা স্ট্যাচুর চোখের কালি মুছে
যুবতীর ভেক ধরা বুড়িদের দঙ্গলে খাপ খাওয়া
 
গাড়িটার রং ক্যানো পিংক হলো না
দুঃখে ভাত না ছোঁয়া!
 
ভ্রমণ শেষ, কিন্তু
হৃত-নদের বাতাসে কান শিরশির করবে অনেকদিন।

 
ছুটিরদিনে অস্তির মধ্যে যা যা ঘটমান
 
যাতে তুমি বুঝতে পারো
প্রতিটা মৃত ভাষায় অনূদিত হবে
এই ফ্রেস্কো:
“আকাশ তার তিরোধানে কেঁদেছিলো
বাতাসেও মিশেছিলো লংকার ঝাঁঝ”
 
আমিও খুব বিগড়ে গিয়ে
বিষ গলায় ঠুকেছিলাম
নীল হয়েছিলাম সত্যি, উগড়ে দিয়েছিলাম সবটা
একরত্তি চিৎকার শুধু আটকে ছিলো কণ্ঠনালিতে, প্রিয়...
 
মূলত রাস্তা আমাকে ছিবড়ে খেয়েছিলো
যে রাস্তায় নামে
তাকেই সে হজম করে নেয় - এই হচ্ছে সমাচার
তাই ঘরে বসে লো ভলিউমে কাঁদা ছাড়া
কোনো গতি ছিলো না
 
কীভাবে তোমাকে যে বলি, স্বজনের মড়া খাওয়াই
আমার গোত্রীয়-সংস্কৃতি
কীভাবে স্বীকার করি মাংস খেতে গিয়ে
কতবার লবণের অভাবে, লাজে ভুগেছিলাম নিজেও
...
 
যাই যাই
 
যারা যারা নিমের ফল খেয়ে ডাগর হয়েছি
বাদুড়ের সঙ্গে ভাগ করেছি মাংস
জঙ্গলে জঙ্গলে খুঁজে বেরিয়েছি স্মৃতির হাড়মাস
সান্তালী বাশুড়ি যাদের করেছে ছন্নমতি -
 
সকলের বৌয়েরাই নিরুত্তাপ ম্যানেকিন হয়ে গেছে
প্রিয় গানগুলি মোমের পুতুল
গায়কেরা কণ্ঠস্বরের মমি উল্টে রেখে
                                                      ডিঙিয়েছেন কাঁথ
 
অর্ধ-নররা আমাদের সেধেছে রেতঃজুস
অর্ধ-নারীদের কথা নাই বা লিখি
 
ধাওয়া খেয়ে আমরা হন্তদন্ত, আমরা ছুটেছি দূরে-দূরতরে /
 
মন চায় মুনিয়ার মতো উড়ে যাই
আপাতত একটা ট্যাক্সি খুঁজে দিলে অর্জিতে চলে যাই
...
 
গন্ধমাদনটা ধরো তো, আসছি
 
Love is zero in tennis and everything in life…….
 
হুব্রিসে কুলালে, নাও
সইতে পারলে বও মাতলা রূপছবিটা
যেখানে চিড়িয়াশালার সমস্ত পোষাই নপুংসক হলো
সিনায় জোর থাকলে
টেনে ধরো থেতলে যাওয়া মেঘ-আর্কিপেলাগোর পুচ্ছ
আলতামিরার বাইসনের হিংস্র রণন
গুল্মে লেগে থাকা ঝররা চুম্বনরাশি লোটো
অভিযোজিত হও নিও-নরমালে
নাই হও
গুহামানুষের উরশে দাও নাম
 
জুতার প্রজাপতিটাকে শক্ত আঁটুনিতে বেঁধে
রে অটো-ইরোটিক বালক
ভেন্টিলেটরের পাখায় কেটে আসা স্বপ্নধুনে, হও ফানাহ!
 
আমার চোখ দুইটা তোমাকে লিখে দিলাম চিরতরে

 

ক্যাটাটোনিয়া

(দুনিয়ার সকল অ-ফটোজেনিক মানুষকে)
 
স্ট্যাম্প থেকে ঝরছে অরুন্ধতীর ছোট্ট কণা
 
আসো, তোমাকে ছবিতে সাঁটি
চোখ বুজে থাকো
নড়লে ব্যথা বাড়বে
পুরাতন চিঠির গুম চরিত্ররা গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে
চাঁদের ভূষি ছড়িয়ে দিচ্ছি কফিমগে
খেয়ে ঘুমবটের পাতা চিবাও
চেষ্টা করো
 
ছবিরা তো উম্মি
ছবিরা ঘন কৃষ্ণ মারীতেও থাকে যুবক-যুবতী
অক্ষত রাখে টেক্সট-বুক স্বভাব
 
রঙ-করা রোডসাইড গাছেরা চায়
                         তুমিও অমন চুপটি হও
           বিলে বিম্বিত সন্ধ্যাতারা হও
নক্ষত্রের হাজিরাখাতায় শুধু থেকে যাক তোমার
নাম
 
রূপক যেদিকে যায়

(বন্ধু ও ভাই, মুহাম্মদ তাহমিদকে )
 
কালো পাথরে কপাল ঠুকে ঠুকে
জ্যান্ত কোরবান আমি
পথে সমস্ত মন্দিরের ঘণ্টি বাজাতে বাজাতে বাড়ি এসে
রাবণের দশমুণ্ডুর কোনো একটায় 
ঢুকে পড়তেই...
পরদা খসে পড়ে
মন্দির ধসে পড়ে
রক্তের বদলে শাদা পুঁজে কালো পাথর মাখো-মাখো
যেমন অমল ছিল আদমের জন্মদিনে...
পাপ শব্দটা অভিধান থেকে কাটা পড়ে আমার গুণে
বনি যীশুর পরমাত্মীয়, তারই মতো অনিরাপদ...
প্রযুক্তি-বিজিত আমি প্রথম মানুষ
হই আদম ও ইভের ছোটোভাই
ক্যাপচার কাছে মনুষ্যত্বের স্বত্ব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে
লুকাই এখন কার কিংখাবে বলো!





তানহিম আহমেদ।

 জন্ম ২০০৩ সালের ৩ রা এপ্রিল ঢাকার অদূরে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়ন করছেন। বাংলা কবিতায় আগ্রহী। একমাত্র ছাপা পুস্তক "নরক গুলজারে বাজছে মেহেদী হাসান" (বৈভব, ২০২৫)।

Post a Comment

0 Comments