তালেবানের কবিতা

 


কবিতাগুলো কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত পোয়েট্রি অফ দ্যা তালেবান বই থেকে নেয়া। ভাষান্তর করেছেন মীরওয়াইস রহমানি ও হামিদ স্তানিকজাই। সম্পাদনা করেছেন অ্যালেক্স স্ট্রিক ভান লিনশোটেন ও ফেলিক্স কিউন। দুজনেই কিঙস কলেজ লন্ডনে ওয়ার স্টাডিতে পিএইচডি করা।

বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পাকিস্থানের ওপর আমাদের সবার একটা বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো। এই বিরূপ মনোভাব থেকে বাদ পড়েনি উর্দু সাহিত্য। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে উর্দু সাহিত্যের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিলো অনেকটা লুকোচুরি কিঙবা এই সাহিত্যের সাথে আমাদের সম্পর্কে ছিলো অনেক টানাপোড়েন। জাভেদ হুসেন কিঙবা অন্যান্যদের হাত ধরে সে সম্পর্কের ভাটা অনেকটাই কমেছে। এটা হওয়টাও জরুরী ছিলো কেননা সাহিত্য সার্বজনিন। তালেবানদের রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ এবঙ সেই সাথে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন তথা বিশ্ব রাজনীতির ব্যাপারে অনেক মত বিমত আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের সাহিত্যের সাথে আমাদের সম্পর্কের যেনো ভাটা না পরে। আপাতত এইটুকুই মন্তব্য।

 কায়েস সৈয়দ

 

আবাবিল

 

বসন্তের পরিবর্তে শরৎ এসেছিলো তোমার কাছে, জন্মভূমি আমার

একটি উত্তপ্ত বাতাস আর আগুনের প্রবাহ নেমে আসলো তোমার ওপর

তোমার ইচ্ছের ফুলগুলো ম্লান হয়ে গেলো এ পৃথিবীতে

চতুর্দিক থেকে তোমার কাছে আসলো ক্ষমতা আর নিষ্ঠুরতার ঝড়

দরিদ্রতায় তুমি ছিলে ক্লান্ত আর অবসন্ন

লাল চওড়া মুখের শিকারি আসলো তোমার দিকে

তুমি দেখলে দেশী আর বিদেশীদের নিষ্ঠুরতা

তোমার ওপর নেমে আসলো যুদ্ধ পীড়ন খুন হত্যাকান্ড

এ পৃথিবী তোমার জন্য নরকে পরিণত হলো, তুমি তাতে জ্বলছো

তুমি এখনো মারা যাওনি, আরও গুলি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে

তুমি তোমার অনেক সন্তানকে বানিয়েছো স্বর্গের দূত

দূর থেকে তোমার কাছে এসেছে শয়তান আর অতর্কিত আক্রমণের সৈন্য

আরো একবার তারা তোমাকে আগুনে কাবাবের মতো পুড়েছে

আফগান নামধারী শয়তানের পুতুল তোমার কাছে এসেছে

আবারও সৈন্যবাহিনী নিয়ে এলো তারা, তৃপ্ত নয় এখনও

মহান কাফেরা, সময়ের মস্ত শিকারি এসেছে তোমার জন্য

পশ্চিমের অহঙকার নিয়ে আব্রাহের সৈন্যবাহিনী

তোমার কাছে এসেছিলো তাদের ট্যাঙ্ক আর হাতির সারি

তোমার সত্যিকারের সন্তান তোমাকে দেবে না এ পৃথিবীর মানুষ সৃষ্ট স্বর্গ

নেতা বা মুজাহিদ, তোমার কাছে এসেছে এক সহানুভূতিশীল আফগান

 

২৫ অক্টোবর ২০০৮

রফিক


আমি হয়ে গেলাম গরিব, ফকির

 

আমি হয়ে গেলাম গরিব, ফকির

তুমি হলে জনপ্রিয়, তারপর রাজপুত্র

আমি হয়ে গেলাম ভবঘুরে, যাযাবর

তুমি দেখলে আর হাসতে শুরু করলে

আমি হলাম নিপীড়িত, তারপর গৃহহীন

তুমি হলে প্রস্তুত মেরে ফেলতে আমাকে

কোনো সমস্যা নেই, এসব পরিস্থিতি কেটে যাবে

তুমি স্মৃতি হয়ে গেলে আমার জীবনে

 

২২ আগস্ট ২০০৮

বিসমিল্লাহ ওয়ারদাক

 

সোনালি পৃষ্ঠা

 

এ শহরে মানুষগুলো একে অপরের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়

এ শহরে কারো ইচ্ছাই পূরণ হয় না

যতোদিন পর্যন্ত তোমার রক্ত পিপাসু চোখ তাদের কোটরে নড়ছে

এ শহরে চলতে থাকবে হত্যা

তারা বেড়ে ওঠবে, সবুজ হবে আর ছড়িয়ে দেবে বাতাস

এ শহরে আমি রোপন করেছি একটি অপরিণত প্রেমের বীজ

খান নবাব নেতা শাসক

প্রত্যেকেই এ শহরে আঘাত করেছে আমার হৃদয়ে

চেষ্টা করি ভুলতে কিন্তু তা অসম্ভব, কি করা উচিৎ আমার?

এ শহরে আমার জীবনের সোনালি পৃষ্ঠাগুলো উড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাতাসে

বিধাতা ভালো জানেন জ্ঞানী আর চালাক লোকেরা কোথায় চলে গেছে

এ শহরে কিছু পাগল ক্লান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়

পূর্বে তারা ব্যবহৃত হতো ডালপালা আর ফুলের তোড়া বাঁধতে

এ শহরে এখন দড়ি ব্যবহৃত হয় ফাঁসি দেয়ার জন্য

হে মজনু! এ শহর থেকে এখন পালিয়ে যাওয়াই ভালো

কারণ মানুষদের কেটে ফেলা হচ্ছে টুকরো টুকরো করে

 

১ সেপ্টেম্বর ২০০৮

মাফতৌন

 

পশ্চিমের অহঙকার নিয়ে আব্রাহের সৈন্যবাহিনী

তোমার কাছে এসেছিলো তাদের ট্যাঙ্ক আর হাতির সারি

হে ঈদ!

 

তুমি যখন আসবে সাথে সুখ আনার প্রতিজ্ঞা করো

এই গরীব জাতির কাছে তাদের শান্তির একটা অঙশ নিয়ে এসো

কিন্তু তুমি এখানে কিভাবে আসবে

আহত হৃদয়ের জন্য নিরাময় হয়ে উঠতে?

এখানে আছে দুর্দশা

এখানে শোক

এখানে কান্না আর দুঃখ

প্রতিটি বাড়িতে ভীষণ বিশৃঙ্খলা

আর তুমি ঈদ

তুমি অনেক সমৃদ্ধ

তুমি সুখের প্রতীক

তুমি সম্পদের প্রতীক

তোমার আছে মেহেদির রঙ তোমার চারপাশে

এখানে আমাদের আছে ক্ষত আর রক্তের লাল

সন্তান হারা মা আর স্বামী হারা বিধবার হাতে সেই রঙ

যে শব্দ তুমি শুনতে পাও তা নারীর অলঙকারের শব্দ নয়

নয় সুখের শব্দ

অস্ত্র আর বর্মের শব্দ

তুমি অজ্ঞাত, এখানে যুদ্ধ, এখানে যুদ্ধ

কোন মরুভূমি নিয়ে তোমার কাছে কাঁদবো?

লাইলি না বাকওয়া কাকে নিয়ে কাঁদবো?

এখানকার সব জায়গা কারবালা

প্রতিটি দিন আমাদের জন্য আশুরা

এটা তোমার পছন্দ : হয় তুমি দেখতে চাও তোমার কবরস্থান

অথবা চতুর্দিকে জ্ঞান দিয়ে নির্মিত একটি কারাগার

তুমি দেখতে চাও আফগানিস্থান

তুমি দেখতে চাও আমির বা সেনাপতি

রক্ত, রক্ত দিয়ে তাদের হাত কলঙ্কিত

যেমনটা তুমি দেখো প্রতিটি আফগান

তুমি দেখো একজন আফগান সন্তান,

তুমি দেখো একজন মুসলমান

 

তাই, হে ঈদ!

আনন্দের উৎস

যে জিনিস দেখায় ভ্রাতৃত্ব

তুমি একতার প্রতীক

তুমি মহান নবীর ঐতিহ্য

যদি তুমি শুনতে পাও, এদিকে এসো না

আমরা তোমার আগমণের জন্য প্রস্তুত নই

আমাদের ধৈর্য নেই সুখের

তোমার প্রভাব যতো বেশিই হোক না কেনো

আমাদের এতিমরা কাঁদতে অভ্যস্ত

আমাদের কাঁদতে দাও

আমাদের ছেড়ে দাও আমাদের দুঃখের মধ্যে

আমাদের ছেড়ে দাও ধ্বঙসের জন্য

আমাদের ছেড়ে দাও আমাদের ভাগ্যের ওপর

তুমি আসবে কি আসবে না

তুমি এই গরিব মহসিনের কথা মানবে কি মানবে না

সেটা তোমার ব্যাপর

 

তাই, হে ঈদ!

সবচেয়ে ভাগ্যবান

হে আমাদের খারাপ অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত

যখন তুমি আসছোই, খালি হাতে এসো না

অতীতের মতো আবেগ ছাড়া এসো না

যখন তুমি আসছোই, ভ্রাতৃত্ব এনো

এনো জাতীয় ঐক্য

এনো সুস্বাস্থ্য

এনো সুস্থ রাজনীীত

এনো প্রেম

এনো প্রাচুর্য

আর........আর.......আর

প্রতিজ্ঞা করো যখন তুমি আসবে সুখ নিয়ে আসবে

এই গরীব জাতির কাছে তাদের শান্তির একটা অঙশ নিয়ে আসবে

 

০১ অক্টোবর ২০০৮

আহমেদ হোসেন এনায়েদ মহসিন

 

 

লেখক পরিচিতি

কায়েস সৈয়দ

০১৯২২২৯১৫১২

সম্পাদনাঃ হস্তাক্ষর

সহযোগী সম্পাদকঃ বিরাঙ

নবীগঞ্জবন্দরনারায়ণগঞ্জ

ই-মেইলঃ kayessyed786@gmail.com

 


 

 

 


Post a Comment

0 Comments