গানের বনে, মনে মনে । পিয়াস মজিদের কবিতা


গানের বনে, মনে মনে

০১.

রাগসংগীতঘন এক রুদ্ধ রাত
না ফেটে ডালিমের রক্তদানা
বুক তো বহু কিছুর মজুতদার
দিনের আলোয় দেখে দরিয়ায়
কত পাষাণ পানির আলপনায়
অতিসহজ রাগসংগীত বয়ে যায়
কোন সুদূর লক্ষ্ণৌ-ফৈজাবাদ
বধের জন্য গলা পাতে মেঘনাদ
চলে গেল কত বিফল বরষাত
চোখে চোখে আগুনের আবাদ
ফুলে বাজে ছাইয়ের নহবত
কান্নাই মানুষের কণ্ঠস্বর 
বাদবাকি হাসিঠাট্টা অভিনয়
আছে সুর
আছে তাল
আছে লয়
মেহফিল ছেড়ে গেছে যারা 
রাতের জওয়ানকি দেখেনি তারা
দেহ বাঁচে নতুন অভিলাষে
রুহ মরে অভিলাষের অতিরেকে
গানে যত রক্ত জমা আছে
রক্তে কি ততটুকু গান থাকে
আমি আছি এখনও এইসব
আছে এত কোমল ও ঋষভ
আকাশ আমীর খাঁর আসর
মাটির মুজরা দিতে হে মানুষ
রাগসংগীত-ফাটা খাও তরমুজ
রক্তের কলরোলে গীত নিশ্চুপ।

০২.

শ্বাসরুদ্ধ সুখ
সুরে মশগুল
প্রেম পুড়ে গেলে
গান ফুটে ওঠে
অস্থায়ী-অন্তরা-
সঞ্চারী-আভোগে
সমুদ্র গেঁথে আছে
কারও চুলের সীমাতে
কারা এত কথা বলে!
কথার গায়ে নিত্যকার
ময়লা লেগে থাকে।
কোন সে দ্বীপের অলীক কাসকেটে
একটি অমল কথা তোলা আছে
রাগ-রাগিণীর সংকোচন-বিস্তারে
আমরা আজও মরে আছি বেঁচে
কত কত কুদরতি রঙ্গিবিরঙ্গিতে
মেঘ এসে চাপ দেয় মনে
রঙিন রোদের দরবার বসে
সে-ই তো মনের আনাচেকানাচে 
কিছুই হলো না যে জীবনে
সে জীবন যাপন করব ভেবে
এই সকালে, আসন্ন রাতে
বিক্রম সিং খাঙ্গুরাতে।

০৩.

এই দুনিয়াজাহান
ক্রুশকালার দুপুররাত
ঘুমুচ্ছে এখনও শালিমারবাগ
আমাকে জাগিয়ে রাখেন নূরজাহান নূরজাহান
দিগ্বিদিক যত রোদনের রাগ
সুরে লেপা-মোছা বরবাদ
প্রেমে খান খান
ঘৃণা জায়মান
বিফলে বাগিচার সবুজ স্বাদ
মনে মরুর মৌতাত
পাখিরা উড়েছে সেই কবে
মহাভারতের মাঠ থেকে
দুলদুল ছুটেছে সেই কবে
কারবালার করুণ গীতে
যে আছো বসে আজও
এত এত গানবিরহিত;
আমি গান গেয়ে 
পাহারা দিই তার
মনের মৃতদেহ।

আমি ও জালালুদ্দিন রুমি

'Oh God, take my soul to that place, where i may speak withour words'- Rumi

নালা শাসন করুক সমুদ্র
তোমার ভেতর তুমি শুধু 
জারি রাখো প্রাণের প্রবাহ।
আকাশ নীলপথে সোনার নৌকা
গিরিতরু পেরিয়ে-মাড়িয়ে
কুমিল্লা থেকে কোনিয়াতে
নিয়ে যাচ্ছে তোমাকে।
যে বাঁশি ব্যাহত না দামাস্কাসে
নিশ্বাস নুয়ে থাকে
তোমার তাবরেজে
দালানকে দরিয়া ভেবে
যারা ছেড়ে গেছে
রুহের ফিসফাস,
তাদের জন্য 
কিছু করুণা বাঁচিয়ে রেখো।
ভোর ভেঙে যাচ্ছে
মুহুর্মুহু সবুজ দরবেশে
খয়েরি সুতায় বোনা 
আসন্ন সকালের চাদর গায়ে
ঠেকাতে পারবে তো
বসফরাস-রাত?
সে কোন কবে
মুদ্রা ফেলে গ্যাছো পথে;
সেই নাচের রসে 
সব পা ভিজে গেছে।
ঘাগরা ও পাগড়ির উন্মত্তে
আমাকে মুক্ত করো প্রভু
আমাকে বন্দি করো প্রভু
এ হেন জন্মে ও বিনাশে
উত্থান অনুভূত হোক 
শিশ্নে ও বিপ্লবে।
আমার আকুল চুম্বন নিয়ে 
ওড়ে গেছে চিড়িয়া,
তাকে ধরো 
হাজার বছরের রুখাসুখা 
ঠোঁটের কসমে।
আমাদের অস্তমিত আলিঙ্গনের প্রভা-তে, বিভা-তে
সূর্যাস্ত সেদ্ধ হয়ে 
ছড়িয়ে যাক চতুর্দিকে, চন্দ্রছাইয়ের উদয়ে উদয়ে।
এই বেদরদি মরসুমে
মিলন কী আর বিরহ লিখবে
পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা 
এলিক শাফাকে!
শেষরাতে যে তোমার 
দিল কা হাভেলিতে 
দাউদাউ করে বসন্তবাতাসে
কারনেশন ফুটল 
কোথায় কোন কবে
স্মৃতি পুড়ে গেছে নির্বিশেষে
ধারাবাহিক সফল সঙ্গমে 
কিংবা খুচরা মাস্টারবেশনে
আমার কী পানাহ হবে প্রভু
আমার কী  উপায় হবে প্রভু
আজান ফুরালে 
গম্বুজের হাহাকারে
শূন্যতার যে চুমকি ফোটে
নিখোঁজ নন্দনে
বন্দর থেকে বন্দরে
উদ্বাস্তু অন্তরে
গোধূলির সফর শেষ হয় না
কোনও নিভে আসা শামাদানে 
বেঁচে থেকে মরে যাওয়ার 
গন্ধ বিলাতে থাকি
মুমূর্ষু  আত্মার আগরে, আতরে


আমাকে পাবে না তুমি

তোমাকে পাব না আমি


তবু

প্রেম মানে 

খুৃঁজতে থাকি


আমাকে তুমি

তোমাকে আমি।


Post a Comment

0 Comments