কবির হোসেনের কবিতা

 

কেউ পারেনি, আপনি পারবেন না স্যার

 

হাজিরা খাতায় নাম লেখা ছিল কালো কালি দিয়ে, সেখানে আজ শত শত নাম লাল কালির হয়ে গেছে
 
যতই চেষ্টা করেন না কেন স্যার, ওদের আপনি মুছে ফেলতে পারবেন না
 
বিপ্লবে যারা মরে একেকটা হীরার টুকরা, যতই মুছবেন ততই উজ্জ্বল হবে
 
আপনি হাজিরা খাতায় নাম ডেকে যান শুধু, আর লাল নামগুলো পড়ে কান পেতে শুনুন— 
 
পৃথিবীর তাবৎ তরুণ 'প্রেজেন্ট স্যার' বলে ওদের উপস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছে...

 
 
ঘুমিয়েছিলাম, মরি নাই
 

আমাদের ঘুম পাড়িয়ে ওরা 
স্বপ্নটা চুরি করে যায়
লাশের পর লাশ বানিয়ে 
নিজেদেরটা সাজায়
 
ঘুম থেকে উঠে খুঁজি
দেশটাকে যে কোথায় পাই
চোখ ঢলে বুঝতে পারি
দেশ আছে আমরা নাই
 
দেশটা কারো বাপের নাকি
বাপের স্বপ্নে যে গড়বে
দেশ এগোবে তরুণদের স্বপ্নে 
প্রয়োজনে মরবে
 

দেশে নয়, প্রেমিকা, ট্রমায় আছি
 

দিনেদুপুরে খোলা চোখে আমি এক দুঃস্বপ্ন দেখেছি
 
দেখেছি তরুণ রক্তে স্বৈরাচারী একজনের হাত লাল, পায়ে আলতা হয়ে আছে
 
যেন দীর্ঘ এক লালশাক ক্ষেত মাড়িয়ে এসেছেন তিনি, তরুণ শাকের গলা টিপে টিপে হাত করেছেন রঙিন
 
প্রেমিকাকে তাই বলে দিয়েছিমেহেদি দিয়ে হাত লাল কোরো না আর, কোরো না পা আলতা দিয়ে
 
হাঁটলে তখন মনে হবে পিষে দিচ্ছ আমাকে, জড়িয়ে ধরলে মনে হবে ধরেছ গলা চেপে
 
 
 
 
 
সৎকার 
 


রাজপথে মরারা তো কখনো মরে না!
 
মা তাই ছেলের লাশ নিয়ে বিপদে পড়েছেন
 
মাটি নিতে চাচ্ছে নাজীবিত নাকি কবরস্থ হয় না
 
শকূন খেতে চাচ্ছে নামরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি আছে, তবুও নাকি মুখ লাগাবে না
 
শেয়াল, কুকুর, মাটিকোথাও সৎকার হচ্ছে না
 
আজরাইল কেন তার প্রাণটা কেড়ে নিচ্ছে না?
 
আজরাইল পারবে না মারতে, পারবে না সৎকারে সাহায্য করতে
 
তবে রাজভবনের ঠিকানা দিয়েছে সে
 
যেখানে শত শত মানুষ খেয়ে নিমিষেই মুখ মুছে ফেলে
 
 
 
কোনো অভিমান নেই
 

গোস্যা করি নাই মা
আজ এমনিতেই ভাত খাবো না
 
ভাত খেয়ে দেহ বাঁচানোর ইচ্ছা নাই
যদি না বেঁচে থাকার ইচ্ছা পাই
 
টেনিস বলের মতো উড়ে আসা বুলেট
বুক দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে আউট হচ্ছে যারা
ওরাই তো আমার ইচ্ছা, একে একে গেছে মারা
 
রাগ করি নাই মা
ক্ষুধা আছে তবু খেতে ইচ্ছে করছে না
 
একে একে বুলেট খেয়ে বুক ভরছে ওরা
আমি তো ভাত খেয়ে পেট ভরতে পারি না!
 


Post a Comment

0 Comments