কায়েস মাহমুদ এর কবিতা



আ ক্লিন সুইসাইড ইন ক্যাপিটালিজম 

যারা যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাবেন এই দশকে, 
তাদের অভিবাদন জানাই।
যেনোবা, আঁটকে গেছি হতাশাবাদীর দলে। 
কেনোইবা বেঁচে আছি ভাবতে ভাবতে ক্রমশ ফিরে আসছে বরফ যুগ 
যারা যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাবেন এই দশকে, 
আপনাদের অভিবাদন জানাই। 
লড়াই জারি রাখুন-
যারা যারা কেড়ে নিয়েছে আমাদের মুখের গ্রাস,
যারা যারা কেড়ে নিয়েছে ফসলের জমি, 
যারা যারা অস্ত্র ধরেছে আমাদের বিরুদ্ধে, 
যারা যারা কাজ ছিনিয়ে লাথি মেরেছে পেটে, 
যারা যারা ক্রমশ ভীষণ হতাশ করে মৃত্যু লিখছে আমাদের, 
তাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখুন। 
বুলেটের উত্তর ফুল ছুড়ে হয় নি কোনদিন। 
আমাদের চাই বন্দুক, আরো আরো বন্দুক, এবং ঘৃণা। 
শ্রেণি শত্রু নিধনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তুতি। 
খতমের রক্তে ভরিয়ে দিন স্বৈরাচারের সমস্ত মসনদ। 
যারা যুদ্ধে যাবেন—
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায়,
ধানের ক্ষেত ও সুন্দরবন রক্ষায়,
মেঘনা নদী ও উপসাগর রক্ষায়,
তাদের অস্ত্র ক্রম শাণিত হোক।
বিপ্লবী নই, কবিতা লিখতাম কেবল। 
আর কিছুই নই। 
কোনদিন ছিলাম না তো।
মুক্ত হতে পারি নি কখনোই। 
ক্রমশ ভিড়েছি ভীষণ হতাশাবাদীর দলে-
আমরা যারা ভেঙ্গে গেছি ভীষণ ভাবে হারিয়েছি, 
আমরা যারা হতাশ হয়ে ক্রমশ লিখি সুইসাইড নোট। 
আমাদের ব্যর্থ হৃদয়ে, ব্যর্থ মগজে আপনাদের অভিবাদন জানাই- 
যারা যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাবেন এই দশকে, এই দশকে।

সাম্যবাদের দুদিন পর

আমরা যারা শরীরে বয়ে চলি জীবনানন্দের ভুত,  
রাম নামের বদলে দমে দমে জপি কবিতা। 
দুই কাঁধের কেরামান কাতিবিন লিখে ফেলেছে আমাদের জীবন।

আমরা কালো মানুষ, আমাদের ময়লা চামড়া,
গলা অব্দি মহুয়া খেয়ে মাটির কথা শুনি। 
পুর্বপুরুষ সান্তালদের মতো, আনন্দে নাচি- তীর ধনুক হীন।
চোখ বুঁজি- 
চোখ খুলে প্রতিবার দেখেছি ডেস্টোপিয়ান পৃথিবী। 
কুৎসিত আক্রমণের চোখে চোখ রেখে ধরেছি পরষ্পরের হাত-
আমাদের প্রেমিকা এবং, সহযোদ্ধাদের। 

"তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিওঁ ওয়াতাব্বা
ধ্বংস হোক, আবু লাহাবের উভয় হাত ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক, আবু লাহাবের উভয় হাত ধ্বংস হোক" 
বুলেটের উত্তর ফুল দিয়ে দিতে আমরা শিখিনি,
তবু দেয়ালে দেয়ালে কবিতা লেখা যায়, স্টেনসিলে, গ্রাফিতিতে কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়। 
বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে ভেবেছি সেসব কথা। 
বন্দুক, আহঃ কী শক্তিশালী বন্দুক।
ভাবছি সবচেয়ে সুন্দর কবিতা লিখে ফেলবার পর- 
কেমন দেখাবে সূর্যাস্তের আকাশ। 
কিশোর ছেলের সদ্য সিগারেট ফোঁকা ঠোঁটে ছ্যাকা লাগার মতো হঠাৎ, প্রেমিকা চুমু খেলে- 
কেমন লেগেছিলো তার।
বিপ্লবের রঙ ঠিক কতটা লাল?
তৃতীয় বিশ্ব যতটা রক্ত দিয়েছে তার চেয়েও বেশি লাল? 
বিপ্লবের পর কী করবো ভেবে রেখেছি। 
কেবলতো কবিতাই লিখতে চেয়েছি, 
পিঠে রোদ মেখে দেখতে চেয়েছি বসন্তের গাছ। 
মুক্তির পর একদিন চলে যাবো নদী পাড়ের গ্রামে। 
সাত সকালে নদীর জলে নেমে এসে,
পাখি এবং ফুলেদের সহাস্যে শোনাবো কাদা মাখা  কবিতা। 
রুপসী বাংলার পর নদীর পাখিরা তেষট্টি বছর কবিতা শোনেনি। 

"জাগো জাগো জাগো সর্বহারা, 
অনশন বন্দী কৃতদাস।
শ্রমিক দিয়াছে আজ সাড়া,
উঠিয়াছে মুক্তির আশ্বাস।" 

চোখ বুঁজে ছিলাম, 
খুলে ফেলতেই দেখেছি ডিস্টোপিয়ান পৃথিবী, 
যেমনটা দেখেছি প্রতিবার। 
আমরা যারা কালো মানুষ, শরীরে বয়ে চলি জীবনানন্দের ভুত- 
শ্রেণিহীন সমাজের খোঁজে বন্দুকের সামনে দাঁড়াই। 
কতগুলো ফুলকে কবিতা শোনাবো বলে, 
অশান্ত বিপ্লবে খুঁজছি মুক্তির পথ। 
বুলেটের উত্তরে ফুল ছুঁড়ে দিতে আমরা শিখি নি। 
"পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যায় মুরং মেয়ে।
অঙ্গে তার ছোট্ট আবরণী! 
কী নিটোল স্বাস্থ্যবতী!
কবে তার কাঁধে- শোভা পাবে
রাইফেল একখানি!"

Post a Comment

0 Comments