কবির হোসেনের কবিতা

 

অলংকণঃ সাকিব শাকিল

পান্তাভাত
 

সব ভিজে গেছে। শুকনো একখণ্ড কাঠও নেই যে আগুন ধরানো যায়। লাকড়ি সব ভেসে গেছে বানের জলে। ঘরে একমুঠো চালও নেই যে ভাত রান্না করা যায়! তবে কি আমাদের চুলায় আগুন জ্বলবে না মা! আমরা কি খেতে পারব না গরম ভাত! চুলাও দেখি ভিজে গেছে। নৌকার মতো ডুবে গেছে বৃষ্টির জলে। চুলার ভেতরে জল থই থই করে!
 
হাঁড়িতে চিঁড়া ভিজিয়েছেন মা, জলভর্তি চুলায় আজ পান্তাভাত রান্না হবে
!
 
 
নতুন জুতা
 

বিড়ালের লেজে পা পড়ায় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ভেবেছিলাম, চামড়ার জুতা পরলে চিৎকার করে উঠবে তেমনি কোনো গরু, ভেড়া কিংবা ছাগল। কিন্তু মনে হচ্ছে, যেন সাপের লেজের চামড়ায় বানানো জুতাহাঁটতে গেলে পায়ে ছোবল মারে! বন্ধুরা বলেনতুন জুতার এই এক বিষধর স্বভাব, দংশনের আঘাত বড়জোর ঠোসায় থাকে। তবুও হাঁটতে গেলে সাপের ভয়, চুপিচুপি যেন ছোবল মারে
 
ছোবলের আরও বেশি ভয়, পথটা যদি সর্পিল হয়
!
 
 
দেয়ালের ওপর গাছের ছায়া
 
 

গাছ কি দেয়ালকে আয়না ভেবেছে? দেয়ালের ওপর নিজের ছায়া দেখে ঠিকঠাক করে নিচ্ছে নিজেকে! আয়না দেখে পাকা চুলের মতো ফেলে দিচ্ছে হলুদ যত পাতা, নখের মতো কেটে দিচ্ছে মরা সব ডাল! নিয়মিত পরিচর্যায় যেন পুরনো যৌবন ফিরে পেতে চাইছে। গাছ কি তবে গোপন অভিসারে যাচ্ছে! নাকি কেউ আসছে তার কাছে গোপনে!
 
সকালে দেখি গাছতলায় পাতাকুড়ানি কিশোরীটাপরিষ্কার করে দিচ্ছে গাছের সেলুন!
 
 
 
বিশ্ব সুন্দরীর সাথে কবি' সম্পর্ক
 

যে পৃথিবীর দিকে সকলে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ নয়নে, বুঁদ হয়ে আছে সৌন্দর্যে, এমনকি ডুবে ডুবে জলও খাচ্ছেআমার কাছে কিন্তু অতটা আহামরি লাগে না, যতটা আহামরি হয়ে আছে বাজারে। আমাকে বিমোহিত করতে এসে প্রতিবারই তার বুক থেকে ওড়না খসে পড়তে দেখেছি। তার বুকে যতটা জমি দেখেছি, যতটা দেখেছি আখখেত মিষ্টি ফলের বাগান, তারচেয়ে বেশি দেখেছি জল জলাধার।  তাই এই পৃথিবীকে আমার মিষ্টি লাগে না, কেমন যেন 'পাইনসা' সুন্দরী মনে হয়। দেখলেই মনে হয় কোথায় যেন লবণ কম আছে

ক্ষত থাকলে ঢেকে রাখতে পারেন, আমি কিন্তু এমন পৃথিবী লবণ ছিটিয়ে দেখি!

অতি উর্বর জমি
চাই

 
এমন উর্বর জমি কোথায় আছেযেখানে বাঁশের খুঁটিকেও গাছ বানিয়ে ফেলতে চায়। যেখানে কেঁচো বেড়ে ওঠে সাপের সমান। যে কোনো বীজই আকাশিগাছ হয়ে ওঠে। যে কোনো আগাছাই ছুঁয়ে আসে মেঘ। যেখানে কোনো বীজই মৌসুম মানে না, মাটির ছোঁয়া পেলেই ছুঁতে চলে আকাশ! এমন জমি পেলে নাটাই রোপণ করব আমি, ফলাবো দারুণ দারুণ ঘুড়ি!
 
নাটাইকে তখন শালুক ভাবা যেতে পারে, ঘুড়িকে ভাবা যেতে পারে শালুকপাতা!
 

Post a Comment

0 Comments