ইমরুল হাসানের সাথে আলাপ

 


বাঙলা কবিতার পাঠ, গ্রহণযোগ্যতা, পলিটিক্স, বাঙলা কবি ও কবিতাবিষয়ক কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন
কবি, গল্প-লেখক, ক্রিটিক এবং অনুবাদক ইমরুল হাসান।
প্রশ্ন জিজ্ঞাসায় ছিলেন শব্দ মিছিল পত্রিকার সম্পাদক সাকিব শাকিল।

কবিতা না লিখলে আপনি কি করতেন?

রাজনীতি করতাম হয়তো, বা বিজনেসও করতে পারতাম; শিওর না অইরকম...

আপনার কবিতা লেখার উদ্দেশ্য কী?

অইরকম কোন উদ্দেশ্য নিয়া তো আসলে কবিতা লেখা হয় না। লেখতে লেখতে কিছু ঘটনা বা উদ্দেশ্য তৈরি হইতে থাকে হয়তো। মানে, ব্যাপারটারে পুরাপুরি উদ্দেশ্যহীন বলাটাও মনেহয় ঠিক হবে না। আমার ধারণা, বেশিরভাগ মানুশই কবিতা লেখতে শুরু করেন মেবি, এক শব্দ-প্রেমের জায়গা থিকা, পরে তো জিনিসগুলা অনেকরকমভাবে চেইঞ্জ হয়। আমার কাছে এখন একরকমের চিন্তা-পদ্ধতির ঘটনা মনেহয়। মানে, কবিতার ভিতর দিয়া কবিতা লেখার বাইরেও কিছু জিনিস চিন্তা করা যায়। তো, এইটাও খুব স্থির কোন উদ্দেশ্য না আর কি...
*এক ধরণের শব্দ-প্রেমের

আল মাহমুদ তো এরশাদরে নিয়া দক্ষিণ এশিয়ার কোন এক সাহিত্য-সম্মেলন করতে চাইছিলেন

কাক বড় নাকি কবি বড়?
কাক ও কবির তুলনাটা কি রাষ্ট্রপক্ষের লোকজন ছড়াইছে নাকি কবিরাই ছড়াইছে ব্যাপারটা

হা হা হা... ঢাকা শহরের সাংবাদিক-কবিরা ছড়াইছিল মনেহয়। যখন দেখলো, আরে, সাংবাদিক না হইয়াও কবি হইয়া যাইতেছে লোকজন, তখনকার ঘটনা মেবি, ১৯৮০'র দিকে; পরে যা হয়, একটা সার্কেলের বাইরে কেউ নিজেরে কবি হিসাবে দাবি করলে তখন ফ্রেইজটারে ইউজ করা যাইতো।... কিন্তু কোন কবি-ই বাংলাদেশে রাষ্ট্র-ক্ষমতার বড়সড় শত্রু হয়া উঠতে পারছেন বইলা মনেহয় না। আল মাহমুদ তো এরশাদরে নিয়া দক্ষিণ এশিয়ার কোন এক সাহিত্য-সম্মেলন করতে চাইছিলেন;  বা এরশাদ আমলে যে কবিতা-পরিষদ হইলো বা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, অইগুলা তো আওয়ামীলীগের  পা-চাটা সংগঠনই...

ঢাকা শহরের মিডল-ক্লাসের কবি হইতে গিয়া শামসুর রাহমান আর গ্রেটার অডিয়েন্সের কথা ভাবতে পারেন নাই। 


এই সময়ে ছফা ও আল মাহমুদ জনপ্রিয় হয়া উঠতেছে কিন্তু হুমায়ুন আজাদ ও শামসুর রাহমানের জনপ্রিয়তা নাইমা যাওয়ার কারণ কি?

পলিটিক্যাল একটা কারণ তো আছেই; যদিও চাইরজনেরই পলিটিক্যাল পজিশন একইরকম না; হুমায়ূন আজাদ আর শামসুর রাহমান পলিটিক্যালি কাছাকাছি হইলেও রাহমান সাহেব তো কখনোই আজাদের মতো ফ্যানাটিক ছিলেন না। আমার ধারণা, ঢাকা শহরের মিডল-ক্লাসের কবি হইতে গিয়া শামসুর রাহমান আর গ্রেটার অডিয়েন্সের কথা ভাবতে পারেন নাই। মার্কেজ বলতেছিলেন, একজন ডিক্টেটর আর কবি/রাইটারের একটা নিঃসঙ্গতা বা ডিসকানেক্টেড ব্যাপার আছে, কাছাকাছি রকমের; শামসুর রাহমান অই বিচ্ছিন্নতার জায়গা থিকা কানেক্ট করতে পারেন নাই আসলে, তবে উনার সৎ একটা চেষ্টা ছিল; মেবি কিছুদিন পরে, নয়া বাকশাল রিজিম শেষ হইলে উনার প্রতি যে পলিটিক্যাল ঘৃণাটা আছে, সেইটা কিছুটা কমলে, টের পাওয়া যাবে, উনার কবিতার জায়গাটা। কিন্তু উনি যেই ভাষাতে লেখতেন সেইটা তো মারা গেছে আসলে, কবিতাতেও এমনকিছু উনি 'আবিষ্কার' করতে পারেন নাই, যেইটারে সেলিব্রেট করা যায়; তারপরও আরো ২০/৩০ বছর অপেক্ষা কইরা দেখা যাইতে পারে।... হুমায়ূন আজাদ সাহিত্যিকভাবে শামসুর রাহমানেরই ফলোয়ার হইতে চাইছেন, মিডলক্লাসের হাততালি চাইছেন; উনার প্যাশনের কারণে দুয়েক্টা ভালো কবিতা লেখতে পারছেন, অইগুলা বেটার, শামসুর রাহমানের চাইতেও। তবে এই ধারায়, বেটার কবি হইতেছে সিকদার আমিনুল হক, এবং বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও হয়তো।...

ছফা তো পলিটিক্যালি সেলিব্রেটেড একজন রাইটার এখন। উনার স্ট্রেংথটা হইতেছে উনি পিপল-অরিয়েন্টেড সাহিত্য করতে চাইছেন, এইটা উদ্দেশ্যের জায়গা থিকা উনারে হেল্প করছে, উনার 'কম-প্রতিভা' দিয়াও ভালো কিছু জিনিস লেখতে পারছেন। আর আল মাহমুদ তো কবি আসলে। ঢাকার 'সাহিত্য-সমাজের' বিরোধিতা উনারে আরো সেলিব্রেটেড কইরা তুলছে।...

মানে, পলিটিক্যাল একটা ঘটনা আছে। কিন্তু এসথেটিক্যাল জায়গা থিকাও আহমদ ছফা এবং আল মাহমুদ যতোটা 'বাংলাদেশি-বাংলার' কাছাকাছি ছিলেন বা আছেন, শামসুর রাহমান এবং হুমায়ূন আজাদ এর 'বিরোধী-পক্ষ' হয়াই ছিলেন; উনাদের প্রমিতগিরির সাহিত্য তো আর লোকজন খাবেও না, মাথায়ও দিবে না; মানে, চাইলেও এইটা সম্ভব না। তো, ভাষার কারণেই উনারা মারা যাইতেছেন না, উনার সাহিত্যিক আবিষ্কারের জায়গাও আসলে নাই তেমন, যেইটা সময়ের সাথে সাথে রিলিভেন্ট হয়া থাকতে পারতেছে। এইরকম তিনটা জায়গার কথা মনেহয় ভাবা যাইতে পারে।

 উনি বাঙালি আইডেন্টিটির মধ্যেই আছেন, উনি মুসলমনাদেরকও বাঙালি আইডেন্টিটিতে ইনক্লুড করতে চান। আইডেন্টিটি-পলিটিক্সের বাইরে যাওয়ার কোন উদ্দেশ্য তো উনার নাই। যার ফলে, মাদরসার স্টুডেন্টরা ছফা পড়তেছেন, এইটা কোন 'সুখের' কথা না, বরং চিন্তার ব্যাপারই হওয়ার কথা আসলে। -ছফা প্রসঙ্গে)


ছফাকে মাদ্রাসার ছাত্ররাও পড়ার কারণ কি শুধুই পিপল অরিয়েন্টেডের জায়গা থেইকা পড়া নাকি হুমায়ুন আজাদের চেয়ে কম আক্রমণ করে এমন জায়গায় থেইকা পড়া হয়?

হুমায়ূন আজাদ তো সেক্যুলার-মৌলবাদী, পলিটিক্যালি নাৎসিবাদের কাছাকাছি। উনার গালি-গালাজরে 'আক্রমণ' বললে সেইটা ভুল বলা হবে আসলে। উনার মতন নাৎসিবাদীদের কারণেই আমরা নয়া বাকশালের আমরা গর্ভমেন্ট পাইছি বাংলাদেশে। আর এর বিপরীতে ছফার 'বাঙালি মুসলমান' টার্ম তো আসলে নতুন ফ্যানাটিকদের তৈরি করতেছে। বাংলাদেশে ইংলিশ-মিডিয়ামের লোকজন তো বাংলা-বই পড়ার তেমন কোন কারণ নাই, বাংলা-মিডিয়ামের লোকজনও আসলে পড়ালেখার মধ্যে নাই বা আছে যে তেমন কোন নজির দেখতে পাই না, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বিজ্ঞানমনস্কতার নামে কিছু ভেড়া ও গাধা বানাইতেছে, যাদের শিং নাই কিন্তু গুঁতাগুঁতি করার খায়েশ নিয়া আছে। তো, এর বাইরে মাদরাসার লোকজনই তো দেখি বাংলা-বই পড়তেছে, সেইখানে ছফা যে তাদেরকে বাতিল করতে চায় না, বরং একভাবে এনলাইটেন্ট করার মতো ম্যাটেরিয়াল মনে করে, সেইখানে উনারে তো নিতে পারারই কথা। কিন্তু ছফা তো আসলে কোন উত্তর হইতে পারেন না; উনি বাঙালি আইডেন্টিটির মধ্যেই আছেন, উনি মুসলমনাদেরকও বাঙালি আইডেন্টিটিতে ইনক্লুড করতে চান। আইডেন্টিটি-পলিটিক্সের বাইরে যাওয়ার কোন উদ্দেশ্য তো উনার নাই। যার ফলে, মাদরসার স্টুডেন্টরা ছফা পড়তেছেন, এইটা কোন 'সুখের' কথা না, বরং চিন্তার ব্যাপারই হওয়ার কথা আসলে।

কথা বলতে বলতে রাত তখন ১১.৫২, ইমরুল হাসান বললেন,
তো, আজকে এইখানে শেষ করি? কালকে আবার কথা বলবো নে, কি বলেন?

পরের দিন সকাল ৯ টায় সময় দিলেন। পরেরদিন সকাল ৯টায় কাজ পড়ে গেল আমার। বিকালের দিকে নক দিলাম। শুরু করবো কিনা?

না, না, সমস্যা নাই... হ্যাঁ, মোটামুটি ফ্রি-ই আছি...
শুরু করতে পারেন
শুরু করলাম  ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪.১৫

বাংলা কবিতায় কি চলতেছে —
কবিতা লেখার নামে গল্প নাকি গল্প লেখার নামে কবিতা?

যে কোন একটা ট্রেন্ড তো কোন সময়েই থাকে না; বরং অনেকগুলা ট্রেন্ড আসলে থাকে, সবসময়। তবে এইটা ঠিক যে, একটা ট্রেন্ড ডমিনেটিং থাকে বেশিরভাগ সময়। ফর্ম হিসাবে কবিতা ও গল্পরে কিভাবে আলাদা করতেছি, সেইটা একটা ঘটনা। যেমন ধরেন, আগেরদিনে সবকিছু তো কবিতার ফর্মেই লেখা হইতো। আবার গল্পের মধ্যেও কাব্যিকতা না থাকলে হয় না টাইপ ব্যাপার আছে। মানে, জিনিসগুলা একই না, কিন্তু কেমনে আমরা আলাদা করতেছি, অই জায়গাটাতে ব্যাপারটা ডিপেন্ড করে, যে কি ঘটতেছে। তো, আমার কাছে, এই জিনিসটারে এখনকার বাংলা-কবিতার বা সাহিত্যের সেন্ট্রাল কোশ্চেন মনেহয় না। বরং কবিতায় গল্প-বলাটা কমে গেছে অনেক; আর গদ্য এখনো কবিতার বাইরে গিয়া আলাদা ফর্ম হিসাবে নিজের জায়গাটাতে স্ট্রাগলই করতেছে কম-বেশি। মানে, জায়গাগুলা আরো অনেকবেশি এক্সপ্লোরড হইতে পারে এখনো।

 আপনার অপছন্দের কয়েকজন কবির নাম জানতে চাইলে কারা কারা থাকবে?

কার কথা যে বলি! মানে, অনেকের অনেককিছুই পছন্দ করি আমি। তবে কাউরে পছন্দ বা অপছন্দ করার চাইতে কোন জায়গা থিকা কোন জিনিসটারে পছন্দ বা অপছন্দ করতেছি, সেইটা বেশি জরুরি মনেহয় আমার কাছে।

টাইম তো একটা ক্রূশিয়াল জিনিস। যেমন ধরেন, সত্তরের দশকে যখন 'শ্লোগান-ধর্মী' কবিতা লেখা 'কবিতা' হয়া উঠতেছিল, তখন আবিদ আজাদরে ভালো-লাগার কারণ কমই; কিন্তু পরে যখন এক ধরণের কৌষ্ঠ-কাঠিন্য শুরু হইলো, তখন আবিদ আজাদরে এমেইজিং লাগার কথা! যখন 'গদ্য-কবিতা' লেখাটা ফ্যাশন হয়া উঠলো তখন 'ছন্দ-জানা' কবিদের ডিমান্ড :) বাড়তে শুরু করলো। কিন্তু এইগুলা মোস্টলি কবিতার বাইরের ব্যাপারই।

আরেকটা জিনিস হইলো, যাদের নাম নেয়া হয় না, তাদের প্রতিও মমতা কাজ করে। যেমন, মুস্তফা আনোয়ারের কথা মনে হইলো, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরেরও।...

পরিচিত কার নাম বলা যায়? কবিতা তো এখন পড়িও না বেশি; জীবনানন্দ দাশ তো পছন্দের কবি'র লিস্টে থাকবেন;   জীবিত এবং আমার চে বয়সে বড় তেমন কারো নাম মনে পড়তেছে না, যাদের কবিতা পড়লে টোটালি এমেজেইড হইতে পারি, কামরুজ্জামান কামুর সুর তো পছন্দের ছিল আমার, সুমন রহমান আর ব্রাত্য রাইসুর স্মার্টনেস; কিন্তু এখন টানে না তেমন। মানে, সরি, নাম বলতে গিয়া বদনামই করতেছি আসলে :( পরে দেখি, কিছু মনে হয় কিনা...

তার মানে টাইমে টাইমে এদের লেখা আপনার অপছন্দের কারণ হইছিলো?

হা হা হা... না, না, বরং বলতে পারেন উনাদেরসহ অনেকের কবিতা আমি পড়ছি এবং অইগুলা পইড়া আমি এক ধরণের পছন্দ-অপছন্দের ভিতর দিয়া নিজের লেখালেখির জায়গাটা নিয়াও ডিল করছি। কিন্তু মুশকিল হইতেছে, আপনার সময়ে যারা লেখতেছেন তারাই আপনার কন্টেম্পরারি কবি না, বরং যাদেরকে পড়া হইতেছে তাদেরও ডিল করার ব্যাপার আছে। যেমন ধরেন, জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, উৎপলকুমার বসু উনারা অনেক ডমিনেন্ট ছিলেন বাংলাদেশে তখন, মানে, উনাদেরকে পড়া হইতো; শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, আল মাহমুদ এতোটা 'আধুনিক' ছিলেন না তখন ( ১৯৯৩-৯৪'র কথা বলতেছি) বরং অই সময়ে রিফাত চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজরা মাঠ কাঁপাইতেছেন... কিন্তু উনারা যে এক ধরণের প্রেজুডিসের ভিতর দিয়া আগাইতেছেন, সেইটা ধরতে পারার বয়স তো হয় নাই; যার ফলে খালি উনাদেরকেই না, অন্য-ভাষার কবিদেরকেও কিভাবে পড়তেছি, তার ভিতর দিয়া যার যার কবিতা লেখার জায়গাগুলা তৈরি হইছে বা এইভাবেই হয় বইলা আমার মনেহয়। সেইখানে পছন্দ-অপছন্দ বেশ সাময়িক ঘটনাই,  ( ক্রাশের মতন :) প্রেম তো খুব কমই হয় আসলে। তবে আমার মনে হইছে, সার্টেন কিছু কবিতার সাথে আমার প্রেম হইছে, যেমন জীবনানন্দ দাশের "জার্নাল:১৩৪৬", গিওম এপোলিনিয়রের "আনা'স গার্ডেন"... পছন্দ-অপছন্দগুলা মেবি এইরকমভাবে তৈরি হইছে...

আরেকটা জিনিস হইতেছে, কবিতা খালি কবিতা দিয়াই ইন্সফ্লুয়েন্স হয় - তা তো না, অন্য আর্ট-ফর্মগুলারও তো কন্ট্রিবিউশন আছে; যেমন এন্ডি ওয়ারহলের পেইন্টিংয়ের মতন একটা কবিতা আমি লেখছি, এইরকম জায়গাগুলাও আছে আর কি...

কবিতা আপনি কী দিয়ে বিচার করেন? ( ভাল লাগা বা খারাপ লাগার ক্ষেত্রে)

কবিতা তো অনেক দিকেই বিচার করা যায়, কিন্তু বিচারের আগেও সেইটা কোন না কোনভাবে কবিতা হয়া উঠতে হয় আগে; মানে, কোন না কোনভাবে কানেক্ট করে, বা ভাল্লাগে, পুরাটা বুইঝা উঠার আগেই। তারপরে আসলে খেয়াল করি, কেন ভালো লাগতেছে? সবসময় যে স্যাটিসফ্যাক্টরি আনসার পাওয়া যায় - তা না; কিন্তু কবিতার এক ধরণের বিচার হয় আসলে; মানে, যেইটা 'এমনিতেই ভাল্লাগতেছে' সেইটারও কিছু কারণ লোকেট করা যায়, আমরা ভাবতে চাই বা না-চাই; কিন্তু যেইটা বলতে চাইতেছি, কবিতার বিচারটাই কবিতাটা না সবসময়। দেখা গেলো, প্রেমের কবিতা বইলাই ভাল্লাগতেছে, নিজের মুডের সাথে, লাইফ-এক্সপেরিয়েন্সের সাথে মিলতেছে বইলা, বা যে কোন কারণেই হয়তো ভাল্লাগতেছে; কিন্তু এই কারণ জানাটা বা লোকেট করতে পারার ভিতর দিয়া কবিতার আনন্দটা হারায়া যায় না, বরং অনেক সময় আরো তীব্র হয়া উঠতে পারে। তো, কবিতার বিচার করাটা কবিতা-বিরোধী কোন কাজ না। এইটা হইতেছে ফার্স্ট কথা।
দ্যান, আমি আসলে দেখি, একটা সময়ের কবিতা বইলা যেই ধারণা আছে, সেইটার সাথে কবিতাটা নতুন কোন কিছু অ্যাড করতে পারতেছে কিনা; মানে, ট্রাডিশনাল অর্থে যে, ভালো কবিতা লেখা যায় না - তা না, কিন্তু আমার নজর থাকে কবিতা'টা কবিতা হয়া উঠার ভিতর দিয়া কবিতা-ধারণার জায়গাটারেও কোন না কোনভাবে চেইঞ্জ করতে পারতেছে কিনা, অইটা আমার কাছে ভালো-লাগার একটা জিনিস। আর কবিতা নিয়া খারাপ-লাগার কথা আসলে আমি খুব বেশি বলতে চাই না। আমি সবসময় মনে করি, এভারেজ কবিতা হইতেছে খারাপ কবিতা। যখন এভারেজ কবিতারে ভালো কবিতা বইলা পরিচয় করানো হইতে থাকে, সেইটা কবিতার জন্যও বাজে একটা ঘটনা। মানে, আমার কবিতার বিচার ভুলও হইতে পারে; কিন্তু সমাজে, সাহিত্যে কবিতার কোন বিচার করা যাবে না - এইটারে ভুল পজিশন বইলা আমি মনে করি। 


____________

(এই জিজ্ঞাসা ও উত্তরপর্বের সময়কাল

১৩, ১৪ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)

.

Post a Comment

0 Comments