জেসিকা আক্তার জেসি'র কবিতা || শব্দ মিছিল



ঘুঙুর

আমি তোমারে ভাঙতে পারি না কোনদিন নিবিষ্টতা ভেঙে পাখির মতোন চোখ খুলে তাকাওনা কোনদিকে আর।

তোমার কাছে এলেই আমার বিষন্নতা
আরও বেশি দীর্ঘ হয়ে উঠে তাঁরে আমি কাটতে বসি।
আঙুলে জেগে থাকে একাকিত্ব 
এমন নিষ্ফল জীবন নিয়ে রাগে, দুঃখে, বিদ্রোহে চিৎকার করে উঠি হাঁসের কান্নার মতোন

তারপর আপনার ঠোঁট দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করি আপনার নরম নরম শরীর
সেখান থেকে রক্ত ঝড়ে আমি ক্লান্ত হয়ে আবারও পায়ে পড়ি ঘুঙুর যেন

এটাই জীবন আমার। তোমার রহস্য ভেদ করতে গিয়ে আপনার কাছে ফিরে আসি কেবল
তবুও তোমারে চিনতে পারি না যেন মহাজগৎতের মতোন বিস্তৃর্ণ একটা অন্ধকার মাঠ।

তার বক্ষঃস্থল যতো খোঁড়া হয় ততোই বের হয় শিমুল ফুল তবুও 
কোথায় এতো রহস্য তাঁর সন্ধান মিলেনা।

তেমনি তোমার  হৃদয়ের দুঃখ খুঁজতে গিয়ে দেখি আমার বুকে একটা পাহাড়।

বন্দর

একটা গাছকে বিকাশ লতা পেঁচিয়ে ধরে ঠিক সাপের  মতোন 
ঠুকরে তুলে ফেলতে চায় বাকল আর ছিঁড়ে খায় হেমন্তের ফসল
অলকানন্দা ফুলে থেকে যায় স্পর্শের দাগ, 
দাগ মুছে যেতে যেতে ঝুলে পড়ে পাহাড় 
তবুও পাহাড়ের চূড়ায় বকের ঠোঁট, শাদা পানিতে ভেসে উঠে পুটিমাছ 
বক মাছ খায়, মাছের জীবন স্বার্থক এমন করেই বদলায় জীবনের ঋতু
ঋতুর পেটে জন্ম নেয় ফুল, ফুলের ঘ্রাণে মোহগ্রস্ত হয়ে মানুষ খোঁজে সুখ
যদিও সুখের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই তাই সুখকে আমরা ভাগ করতে বসি
কখনও তার চোখে কাজল পড়িয়ে কখনও রক্তজবায় লাল হয়ে ভেবে নেই
এটাই সুখ, তথ্যাপি এমন করে দোদুল্য অবস্থায় থেকে যখন বুঝি বয়ে যাওয়ায় শান্তি 
তখন পঁচে যায় বিকাশ পাতা, গুটিয়ে যায় অলকানন্দা ফুল

আর এভাবেই মানুষ হয়ে উঠে একটা কর্ণফুলী নদী।

গোলাপ গাছ 

আমার আব্বা থলে করে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য দুঃখ কিনে নিয়ে আসে
বটি দিয়ে মা দুঃখ কাটে, হাহাকারে ভরে যায় মায়ের দুটি চোখ; 
চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বলি, মা আপনার চোখে সমুদ্র যদি ঢেউয়ে তলিয়ে যাই?

মায়ের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে গোলাপ গাছ, হেয়ালি করে মা বলে,
তোর বাবা ঝড়ের এক রাতে চোখ কেটে কেটে সমুদ্র বানিয়েছিল
যেন তোরা হাঁস হয়ে এখানেই থেকে যাবি চিরটাকাল!

মা এবার আমার খিদে পেয়েছে
এই নে এটা চিবিয়ে খা দেখি, এই বলে মা আমার মুখে একটা গাছ ভরে দিলেন 
প্রথমে ছোট ছোট পাতা তারপর ডালপালা এবং শেষে যখন শিকড় খেয়ে ফেললাম 

মা বলে উঠল, আয় তোর চোখেও সমুদ্র বানিয়ে দেই!
বড্ড অভিমান হলো আমার
দৌড়ে চলে গেলাম মাঠের ওপারে, জড়িয়ে ধরলাম একটা আসমান
তারপর থেকে কিভাবে যেন ঠিক আমার মায়ের মতো  সমুদ্র হলো চোখে ভিতর
একটু বৃষ্টিতে সমস্ত সমুদ্রটা ভিজে যায়! 

আজ উনিও আমার জন্য দুঃখ কিনে নিয়ে আসে, মায়ের মতো আমিও দুঃখ কাটতে বসি
কিন্তু কোথাও উড়ে যেতে পারি না, মায়ের হাতে গাছ খেয়ে এখন
আমার পায়ের নখে শিকড় গজিয়ে বহুদূর চলে গেছে!


Post a Comment

0 Comments