ইয়ার ইগনিয়াসের কবিতা | শব্দ মিছিল

 


মমিইরো

১.

মমিইরো,
তীক্ষ্ণ তীরন্দাজের মতন তোমার দুচোখ---
যেন পণ-বাধ্য হন্তারক; উৎকীর্ণে সহসা
তুত-কালো তারার তিমিরে, নিপুণা নিশানা।
মরণ উছলি ওঠে ওই চোখে তাকালেই,
প্রিজম ছটার মতন ঠিকরে পড়া মায়া
শব-স্তব্ধ করে দেয় কম্পমান হৃৎ-শ্বাস;
ঘ্রানের টানেল বেয়ে যদি আরেকটু নামি
বাধাপড়ি নিরীহ-নোলকে; মুছে রাতদিন--
অনুবাদ করে চলি অত্যাশ্চর্য রূপগ্রাম;
তার পার্শ্বঘেষে গেছে, সন্তরণের সরণি...

২.

চুপিসারে খুঁজি কারে, মন থেকে দূরের মহেঞ্জোদারো!
কবন্ধ পাখির মতোই তো অবিদিতে উড়ে গেছে সুখ!
পন্থচিহ্নও নিয়েছে মুছে কম্প্রডানায়; কাঠপিপাসা
জেনেও-সে অদৃষ্টের মতো পরাঙ্মুখ! সমস্ত মূর্চ্ছনা 
শরতে বর্ধিত বর্ষার মতন থেমে গেছে ক্ষনিকেই।
বন-বাদাড় সব সাবাড়, যেন অন্য সকল চিড়িয়া
এইভাবে হয়েছে বিলুপ। হায়! মম প্রাকৃত সারস!  
সে-ও ডুবে গেছে নক্ষত্রের তলে! অনেক ভেবেছি আমি
কমিটমেন্ট কফিন ভিন্ন কিছু নয়; তাই চিরদিন
নজীরবিহীন, হাটখোলা করে রাখি বুকের লাগাম
উড়াল স্বভাব যার, তারে-যে কখনওই বন্দি করিনি!

.

স্মৃতির উস্কানিতে যদি প্লাবন
নেমে আসে করুণ কপোলে
তবে চোখের কী দোষ বলো!
হৃৎপিণ্ডের লালে লেখা নাম
কালের কালিমা যদি মুছে দেয়
তবে আমার কী দোষ বলো!
কাছের কোজাগরীতে চলো
নৈহাটি পেরিয়ে মিশে যাই
চোখের কালোতে, চোখের আলোতে...

.

পুরনো খাতার ভিতর থেকে এইমাত্র বেরিয়ে এসেছ তুমি। জাদুমূর্খ মানুষের দেশ; পথে পথে ছড়ায়ে আছে কথার শর, এই শরশয্যায় পা পেলে কতদূর গিয়েছিলে তুমি ! শুনেছি, এইখানে কাকতাড়ুয়াও নাকি সিঁটি মারে!
সমুখে পড়ে আছে স্মৃতির কঙ্কাল; স্মৃতির অনু অনু দৃশ্যগুলি বীক্ষণযন্ত্রে নির্নিমিখ নিরীক্ষা করি নবিশ চিকিৎসকের মতো; অবলোকনের সব গুণিতকে একে একে বাজিয়ে তোমাকে, পাকদণ্ডী পথ বেয়ে উঠে যাই তসবির-থির দৃষ্টির চূড়ায়!
এইভাবে দেখার উর্বরতায় নেত্রকোঠরে অলখে কখন যেন ফুটে উঠেছে রক্তলাল অলক্তফুল। এ-ভীষণ অসুখের ফুল! অনুরক্ত শিশিরে ভিজে পলক ও পল্লব। আবছায়ায় যায় ঢেকে করুণ কর্ণিয়া!
আকাশের বিদ্যুৎরেখা চোখেতে এঁকে কুয়াশার মতো মুছে দিতে চেয়েছি এই অন্ধকার। অথচ, অক্ষমতার অক্ষরগুলিই স্পষ্ট হয়েছে ক্রমশ! কেননা, অন্ধকারের চেয়ে গূঢ় কোনো রহস্য আজ তুমি! এই দৃশ্য আজও স্পষ্ট; হাওয়ার আগে আগে অবলীন হয়ে যাচ্ছো পথের দুপাশে...

৫.
যেভাবে জংশন ছেড়ে যায় ট্রেন, তারচে' দুরূহধীরে হলো আড়াল; কাঙ্খিত কোজাগরী। তুমি আসোনি, ছাড়তে পারোনি পিছু ও টান, তাই একাই এসেছি চলে নৈকট্য তোলে, নৈহাটি নির্জনে। ব্রিজের গার্ডারে বসে শুনছি ল্যাম্পপোস্ট অনূদিত তারার আত্মজীবনী। ব্রিজের অনেক নিচে চাঁদের প্রতিফলিত আলোরেখা ধরে, নদী পার হয়ে লবণাম্বুজের ভিড়ে গেল ঢুকে একা চিত্রাসাপ। মৌলিক রঙগুলির সকল শেডের এক্সিবিশন হচ্ছে যেন দ্রুতগামী কারগাড়ির বহরে। আর তুমি স্বামী লিভিংরুমে প্রবেশের আগে আগে চন্দনগুড়োর দৌলতে, সুন্দরী হয়ে ওঠো আরও...





Post a Comment

0 Comments