কেমন আছেন
মৃত্যুর পেয়ালা এই বুক
বুকের উপর কোমল শিশুর মতো শুয়ে থাকে মৃত্যু
ওষ্ঠ অধরের মাঝে কারো কারো নাম
অক্ষর হয়ে আসে, আর
অস্ফুট উচ্চারণে তার শিশুতোষ পাঠ—
প্রেমাত্মা মরে গেলে প্রেতাত্মা হয়
প্রেতাত্মা মরে গেলে প্রেমাত্মা হয়
আত্মারা যা হয় হোক
বোধের অন্তমিলে রাখি দুই চোখ...
এ দেহ নিখুঁত সন্দেহ আমার।
আলোর চেতনায় নিজেকে অর্থহীন মনে হলে
জলের গভীরে যার ছায়া দেখি
তা আমারই তো?
শব্দের নিকটে শব্দের প্রতিরূপ বসালে
শব্দ মুছে যায় শব্দে
মৃত্যুর শৈশবে আমার শৈশব মুছে যায় যেমন।
কেমন আছেন, শব্দ ও শৈশবের দেবী?
আপনাকে মনে পড়ার ক্রোধে
আকাশ আর আকাশ থাকে না...
নিরাশ্রয় একটি হৃৎপিণ্ড
কিশোরী ধানক্ষেত চিরে উত্তরে চলে যাও পিপাসা
আমার কালো শাদা রাতগুলো
শরীর ও সবুজের অভিন্ন রঙ আমি নিয়ে যাবো।
আমার আরাধ্য দৃশ্য
হাওয়ার প্রান্তরে হারায় যে বিস্মরণের গান
অনভিজ্ঞ হৃদয় থেকে বেড়িয়ে আসা অবিরত ভয়
বিমুগ্ধ পরাজয়
পাপ ও পুণ্যের সঙ্গমপুষ্ট যাতনা
তসবির দানার মতো সরকারি সুখ দাদীর অসুখ
অরণ্য অভিমুখে চলে যাওয়া একেকটি দীর্ঘশ্বাস— নিয়ে যাবো।
আদরের পাখি নিরাশ্রয় একটি হৃৎপিণ্ড
কোথায় রেখে যাবো আমি?
জন্মদিনের ফুঁ
একটা ফুঁ দিলাম
মোমের শিখা থেকে আগুন নিভে গেল
নিভে গেল অযাচিত বয়স
জ্বলে উঠল হৃদয়ে
হৃদয় স্বল্পদৈর্ঘ্য মোমবাতি নয়
দু' পাউন্ড কেকের উপর কি করে রাখি?
পৃথিবীর উপর রাখলাম হৃদয়
হৃদয়ে জ্বলছে আগুন
এবার তুমি একটা ফুঁ দাও
আগুন নিভে গেলে
হৃদয়টা সরিয়ে স্লাইস করা হবে পৃথিবী—
তারপর কোনো এক মন্ত্রবলে
পৃথিবীর টুকরোরা সব
চলে যাবে
ক্ষুধার্ত সংসদ ভবনে...
মিড নাইট মাস্টারবেশন
আত্মা ঘন হয়ে আসছে। কীটাত্মার ঢল নেমে আসছে আমার দিকে, আপনার দিকে। প্রাতিষ্ঠানিক মদ্যপগুলো, বেসামাল যারা— আমাকে ডুবাবে এবার। ডুবিয়েই ছাড়বে লাল অন্ধকারে।
অন্ধকার আমাকে ঘিরে রাখছে সারাদিন, সারারাত। আপনি তো জানেন, এত অন্ধকারে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভারী লাগে এই নিষিদ্ধ শরীর।
দেখুন, কীট পতঙ্গের আত্মা— আত্মাগুলো আরো ঘন হয়ে আসছে। এবার চলুন দোযখের শেষ দরোজা দিয়ে পালিয়ে বেরোই। ঢুকে পড়ি আরেক দোযখে। নয়তো একটা নরকরাষ্ট্র, একটা দেশ, মাতৃভাষা বাংলার একটা ভূ-খণ্ড— নৌকায় ভেসে যেখানে যাচ্ছে, যুবকের অবশিষ্ট প্রশান্তি ‘মিড নাইট মাস্টারবেশন’ সেখানে সম্ভব নয়।
শব্দ
তোমাকে চর্চ্চা করি
নিরুদ্দেশ শব্দ পাঠাই তোমার দিকে।
তুমি শুনতে পাও না—
অথচ আমার দীর্ঘশ্বাস তোমার দিকেই যাত্রা করে।
জলের থৈ-থৈ শব্দের মত আমার ভেতরে শব্দ হয়
তোমাকে ডাকবার অনুচ্চারিত শব্দ হয়।
ভীষণ শব্দ হয়…
একটা চিৎকারের বড্ড প্রয়োজন হয়ে গেছে আজ
কিন্তু তোমার অসুন্দর আমাকে চিৎকার শেখাতে পারেনি
কিংবা তোমার সুরেলা দুঃখে আমি চিৎকার ভুলে গেছি
কিংবা আমার কণ্ঠস্বর অযুত অযুত চিৎকারে বিলীন
আর আমি—
একটি নীরব খণ্ড-ত’র মত হাঁটু মুড়ে বসে থাকি
বসেই থাকি…
হরিৎ স্বপ্নগুচ্ছ আমাকে দেখতে আসে রোজ—
[তুমি আরো দূরে সরে যাচ্ছ
তুমি ডুবিয়ে যাচ্ছ অতলে কোথাও]
বলো এমন স্বপ্ন আমাকে দেখতে আসে কেন?
ফোঁটা ফোঁটা কবিতায়— ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মত
কেন আসে বৃষ্টি-বৃষ্টি দুঃখ?
বৃষ্টি তো তোমার চেয়ে অধিক বৃষ্টি নয়
বৃষ্টিজন, বৃষ্টির দোহাই দিলাম—
এস, আমার শব্দকলা নির্ভার করে নাও…
_____________________________________
হোসাইন মাইকেল
জন্ম— ৮ জুন, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে। কবিতা ও গদ্য লেখক। সম্পাদনা করেন অনলাইন লিটলম্যাগ দিব্যক।
0 Comments