মোস্তাক আহমেদের কবিতা | শব্দ মিছিল

 

বন্য ব্যভিচার


হাত-পায়ে শেকল পরায় মনোগামী শৃঙ্খল

দু'টো চোখ সারাক্ষণ নজরবন্দি রাখে আমায়

নিরানন্দ উপভোগে ছটফট করি

এর চেয়ে ভয়ংকর কারাগার পৃথিবীতে নেই!


মানবীয় মায়াজাল আমাকে টানে না আর

হাতছানি দেয় বন্য পশুর জীবন

যদি অসংখ্য চোখে পরস্পর নজরবন্দি হই!

যদি বন্য ব্যভিচারে ভরে ওঠে পৃথিবী! 

আমি বেছে নেবো উলঙ্গ জীবন নিঃসংকোচে।


শ্যাওলা পড়া জীবন


কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে করচগাছ

তার ডালে বসে আছে আমার চোখ

নারীর বক্ষে সংসার মেলেছে হাওর

ঢেউ তুলে এক্ষুনি গিলে খাবে আমায়;গিলে খায় না সে

উলঙ্গ বক্ষের দাপট দেখিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে

গাছেদের ছায়াগুলো চুমু খায় জলে

মাছরাঙার ঠোঁটে এক কিশোরী উড়ে যায়

মাছধরা নৌকাগুলো ভেসে ভেসে দূরতম হাওরে লুকায়

হাওরের বুকে ক্রমাগত শ্যাওলা পড়ে

আমার জীবন থমকে আছে হাওরের জরায়ুতে!


জ্যান্ত লাশ


কেবল মরা মানুষের হাড়,লাশ-পঁচা গন্ধ 

শ্মশানে হাত-পায়ের আনাগোনা তবু জ্যান্ত

উপোষী বাঘের থাবায় নারীদেহ

চৈত্রের রোদে জিভ দেখায় অশান্ত কুকুর

শূন্য পেটে সবকিছু হা-করে গিলে আধমরা মানুষ

ক্রমান্বয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে পারিপার্শ্বিক শিকল।



পাঁচ তারকা রঙ্গশালা


বিষন্নতা আসে সন্ধ্যার বাতাসে পশ্চিম জলাশয়ে

হাড়গোড় তিলে তিলে ছিঁড়ে উইপোকার দাঁত

বাঁশপাতার ফাঁক গলে আসা সূর্যের মতন

হাড়ের গুঁড়া বাতাসে দোল খায়

মৃত্যুর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মা

দোলাচলে পড়ে নটে-নর্তকী

পাচার হয় অন্ধকারে—সঙ্গে পুব আকাশ,পশ্চিমের গোধূলি-সন্ধ্যা

প্রাণ আনচান করে পুব থেকে পশ্চিমে

উত্তর থেকে দক্ষিণে বয় রঙ্গশালার মৌসুমি বায়ু।



লেখক পরিচিতঃ

মোস্তাক আহমেদ 

শিক্ষার্থী,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়


Post a Comment

2 Comments

  1. তরুণ কবির কবিতাগুলো খুব ভাল লাগল। তবে এই নামে ‘মোশতাক আহমদ’ এবং ‘মোস্তাক আহমাদ দীন’ নামে দু’জন কবি রয়েছেন। একটু নতুন স্বকীয় ভিন্ন নাম ধারণ করলে হয়তো কবির স্বতন্ত্র পথচলা সহজ হতো

    ReplyDelete
  2. কবিতাগুলো অসাধারণ। কবির জন্য রইল শুভকামনা।

    ReplyDelete