একদিন, হঠাৎ
ওকে শেষ দেখা দেখে আসলাম!
ঠিক সে মূহুর্তে আমাদের স্বপ্নরা ঘুমিয়ে গেছে।
ফাল্গুনের রৌদ্র ভরা শিমুলবন আছে চেয়ে,
দূর দিগন্ত প্লাবিত অন্তরঙ্গ বিষন্নতায়।
কোলাহল থেকে দূরে, আরও বহুদূরে
জীবন ভেসে যায় কৃষ্ণচূড়া জলে।
ওর স্বপ্নগুলো আজ একতারার বিষন্ন রঙ;
রিক্ততায় ভরা বেদনার ঘুঙুর নৃত্য।
বিজন রাতের কুহকে হেঁটে যাওয়া
অন্তহীন চন্দ্রপুরাণ, আকাশের নীলিমায়
বিলীন হয়ে যাওয়া শুভ্র ভাঁজরেখা।
সান্ধ্য ধূপগন্ধী তবুও জেগে থাকে শিথানে,
হৃদয়ের জানালা বেয়ে চলে যায়
স্মৃতি তার, অতল নৈঃশব্দের মগ্নতানে।
এখনও সন্ধ্যে
বৃষ্টিমুখরিত বিকেলগুলো ভিজিয়ে যায় স্মৃতির
আবেশে। সুখের ছন্দগুলো অমোচনীয় তানে বেজে যায়।
দিন থেকে দিনান্তে তুমি হয়ে যাও পরিযায়ী পাখি,
সন্ধ্যার মেঠো আনন্দে জীবন চলে যায় বিদায়ী গানে।
বিস্মৃতির অতল মগ্নতায় চিঠিগুলো পরে থাকে
ভেজা খামে, শুকনো পাপড়িগুলো বিলিয়ে যায় শেষ
সৌন্দর্যটুকু, উড়ে যায় শূন্যে, তোমার পানে।
হৃদয়ের নীলিমা ছেড়ে যায় এক ফালি মেঘ,
যেন সন্ধ্যের আলেয়া বুকে নিয়ে হেঁটে যায়
আমরণ অনশনে থাকা কিছু দাঁড়কাক, উড়ে
যায় পোড়োভূমি বদ্ধ নিশ্চল পাথারে, যেন
এখনই ভেঙে যাবে, সবকিছু সন্ধ্যের ভেতরে,
বৃষ্টির আঁধারে বিলিয়ে, স্মৃতিটুকু আজও মানুষ।
ভালো থেকো অভিমান
পাতার ঝিরিঝিরি কাতরতা আজও ভাবায়
কি করে সে মরে যায় বসন্তহীন, মানুষহীন!
প্রেমাধারে যদি সত্যটি পাখি হয়ে উড়ে আসে
তবে আমরাও জানতে পারি এ হৃদয় সেদিন
পাখি ছিলো, ফাঁকা শস্যের মাঠ, অন্তহীন কাতরতা
আজও করুণ শীৎকারে বেজে যায় পৌষের রাতে।
রক্তে জেগে থাকা ফেনিল স্বপ্ন, হৃদয়ের রঙ
আজ তবু অভিমান, শূন্যতায় ভাসা জড়োয়া
কাতান, ভেঙে ভেঙে ভেসে যায় কালহীন কূলে,
উড়ে যায় অন্তরীপ থেকে; অন্ত্য হয় ঐন্দ্রিয় ভগ্নাংশে।
এই কবিতা তোমার জন্য
আজও স্মৃতি খেলে যায় শ্রাবণের রাত্তিরে,
কুয়াশার কুহক আর্ত ডাহুকী সুর, নিদ্রাধারে।
বেজে যায় অমলিন সুরাধ্বনি, তানহীন তানে।
কথা কিছু ছিলো বাকী- ছিলো কি! নাকি কান্না!
দুমড়ে যেতো প্রশ্বাসের দমক, ভেঙে যেতো সব
খোলামকুচির আঁধারে, একা স্বপ্নহীন রোদ্দুরে।
একা-একা উড়ে যায় গাঙচিল ডানা, মেঘে;
নামাও কি সেসব বৃষ্টি, মাধুকী সুর তুলে দূরে।
এই সেই পথ, নয় কি! যেতে যেতে সবকিছু!
অরণ্যে, কি জানি হয়! উবে যায় শূন্য ঢেউ,
তবু মনে হয় দুপাশে সারি সারি তুমি দাঁড়িয়ে,
একান্ত আলাপ গুঞ্জরিত গুনগুন শব্দে হেসে।
আস্পদ, প্রেমাকুল সবকিছু যেন উদাসিনী স্বপ্ন
ডুবে যায়, রাত্তির ভেজা, তুমি-আমি বরষনে
স্মৃতির চিলেকোঠা
অকস্মাৎ দৃশ্যের চিত্রপট বদলে গিয়ে হয় রঙচটা
জীবনের প্রতিচ্ছবি। অতল গহন খেলায় নটীলাস্যে
নেচে যায় পুরোনো কিছু সময়। একান্তে মন অনুক্ষণ
ভেসে যায় রাজকীয় লীলা পরাকাশে। স্মৃতির বারান্দা
থেকে ঘর, ছাদ, আকাশ, ফুলের টব, শুষ্ক মাটি গন্ধ
বিলিয়ে যায়। একাকিত্বের শূন্যতা ভেসে গিয়ে কথা
বলে এক একটি আসবাব। আলো এবং ছাঁয়ান্ধকারে
কেউ নেই! তুমি নেই! এই করে কেটে যায় সারাবেলা।
ধুলোপড়া এ্যালবাম, শুকনো ফুল, ছেঁড়া পাতার
গান, ভেঙে পরে হৃদয়ের কার্ণিশে। অনর্গল কথা,
যেন কেউ আছে, জঙধরা এই ঘরে, পদধ্বনি ভেসে
আসে, অসমাপ্ত ভ্রান্তি নিয়ে বুকে, শিয়রের কাছে;
ঘরটা আজও জ্বলজ্বলে স্মৃতিকথা, যেন পঁচে গেছে
বর্তমান, কিছু নেই, কিছু নেই! তবু আছে চিলেকোঠা।
0 Comments