ফুল নয় বুলেটের উত্তরে || কায়েস মাহমুদ ।। কবিতা


 পোস্ট মর্ডানিজম জানি তবু শেফালিকে চাই

তুলা গাছটায় পড়ে যাচ্ছে একটা আস্ত সিগারেট। আগুন লাগছে ডালে। 

আহ জ্বলে যাচ্চে, জ্বলে যাচ্চে। 

ওঃ শেফালী! জ্বলে যাচ্ছে, জ্বলে যাচ্ছে। 

ড্রেনের ওপাড়ে ঢেঁড়ে ইঁদুর গুলোর মতো কুটকুটিয়ে জ্বলে যাচ্ছে। 

যা শালা, ঘেউ ঘেউ করে ডেকে যাচ্ছে কুকুরগুলা। 

তোমায় কাছে পেলে ভুলে যাই কুকুর ভীতি, বিড়ালে আমার এলার্জি। 

প্রতি লোমকূপের নদীতে স্নান করি, তুলে আনি নিখুঁত আলো। 

ওঃ শেফালী, তোমারে শুঁষে নিতে নিতে চায় লম্পট, উচ্চবংশী মহাপুরুষ৷ 

আমি অচ্ছুত ম্লেচ্ছের ব্যাটা, তোমার ফরাসি শরীরের ঘ্রাণ পেলে ভাবি-

সব কিছু জ্বালিয়ে দিবো,সব- 

কবিতা এবং আর যা কিছু!  

ঝুলে যাওয়া বৃদ্ধার স্তনের মতো, সম্পাদকের আমাকেও চায় না।

দীর্ঘদিন বেকার, একটাও চাকরি নেইই। 

তোমারে শুঁষে নিতে চায় লম্পট, উচ্চবংশী মহাপুরুষ৷ 

শেফালী, আমি মরে যাচ্ছি শেফালী,

আমার সমস্ত আত্মা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে

আমি জীবন থেকে মৃত্যুর মাঝে উড়ে চলে যাবো,

মৃত্যু থেকে বুকের ওপরে উড়ে চলে যাবো।

তোমার উর্বশী যোণীর বেদি ঢেকে রাখো, এখন চোখ মেললে উড়ে যাবে তিন হাজার শালিক পাখি। 

ওঃ শেফালী! আমায় অন্ধ করে দাও শেফালী।

ঢেকে দাও তোমার মসৃন শরীরে।

পোস্ট মর্ডানিজম জানি, তবু শেফালীকে চাই   

অরাজনৈতিক জীবন 

আমি একটা অরাজনৈতিক জীবন কাটাই এলাকার কুত্তা ঘেউ ঘেউ কইরা ডাকে আমি প্রচন্ড অরাজনৈতিক জীবন কাটাই

এক দুপ্রে ফালগুনী পর্বার পর আমার আর কিছু করার নাই আমার আর কিছু করার নাই বইলা হাংরিদেরই পর্তে থাকি গুরুপাক সাহিত্য আমার প্যাটে সয় না আমি শুনেছি সেদিন নাকি তুমি তুমি তুমি মিলে তোমরা সদলবলে সভা করেছিলে সারে সা সারে সারে সা আমি একটা অরাজনৈতিক জীবন কাটাই

টংগে ক্যাপাস্টেন নাই হাইটা কিরণের সাম্নে গিয়া বিড়ি ফুঁকি আকাশ ভ্রমনে গেলে ক্যাপাস্ট্যান পাবো না যখন আকাশ ভ্রমণে যাবো তখন কোবতে কর্তে পার্বো না বইলা আমি হাংরিদের পর্তে থাকি এলাকার কুত্তায় ডাকে ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ আমার চৌকিদারের গায়ে দোতলা থেইকা পানি ঢাইলা দিতে মঞ্চায়

কুত্তার আর শিয়ালের ল্যাঞ্জার পার্থক্য নিয়া কেউ কোবতে ল্যাখে নাই দোতলা থেইকা পানি ফালানো নিয়া আমার একটা কাহিনী আছে ছোট বেলার দিকে একবার এক লোকের মাথায় ঢাইলা দিছিলাম মগে কইরা বারান্দায় দাঁড়াইয়া সোজা নিচে এক লোক ছিলো রিকশায় সাইজা গুইজা যাইতেছিলো যেই লোক তার মাথায় ঢাইলা দিছিলাম

কাট কাট কাট উপরের প্যারাটা কত ভাবে পড়া যায়

গুরুপাক সাহিত্য আমার প্যাটে সয় না কিছু করার নাই বইলা হাংরিদেরই পর্তে থাকি এক দুপ্রে ফালগুনী পর্বার পর আমার আর কিছু করার নাই আমার আর কিছু করার নাই বইলা হাংরিদেরই পর্তে থাকি আমি একটা অরাজনৈতিক জীবন কাটাই এলাকার কুত্তা ঘেউ ঘেউ কইরা ডাকে আমি প্রচন্ড অরাজনৈতিক জীবন কাটাই

তারারাম তারারাম তারারাম সারে সা সারে সা সারে সা

 প্রাগৈতিহাসিক সাপ 

চেচামেচি করে মদ এবং চুমুর মাঝে ইশ্বরকে ধরে রাখা মানুষদের ভিড়ে-

আমি এক মহিমান্বিত পুরুষ পোড়ে ফেলি ওয়ার এন্ড পিস।

যুদ্ধকে মনে হয় নারীর দুই স্তনের লড়াই, পুরুষের উদ্ধত জিভে জায়গা কেড়ে নিতে

কি ভিষোণ পিপাসী, ভয়ংকর দানবের কাছে সপে দেয় কোচুরিপানার ফুল। 

আমি কবর থেকে তুলে নিয়েছি আমার আয়ু,

কোচুরিপানা নয় আমার প্রিয় হাসনাহেনার তলায় বসে থাকা সাপ। 

আমি এক মহিমান্বিত পুরুষ, বিষদাঁতে চিনে নেই রক্তের কামড়।

রাত দুটার পর পুর্বপুরুষের কাম চিন্তার সঙ্গে আমার কোন তফাৎ নেই,

তবুও আমি মহিমান্বিত একজন, কাম ছেড়ে ফিরে যাই কবিতার কাছে। 

সমস্ত প্রাচীন প্রেমিকাদের ছবির দিকে তাকালে মনে হয়,

কোচুরিপানা নয় আমার প্রিয় হাসনাহেনার তলায় বসে থাকা সাপ।

রাত দুটার পর পুর্বপুরুষের কাম চিন্তার সঙ্গে আমার কোন তফাৎ নেই,

তবুও আমি মহিমান্বিত একজন, দাঁত ভেঙ্গে হেটে চলি গোরস্থানের রাস্তায়।

ক্লান্তিতে থেমে যায় প্রাগৈতিহাসিক সাপ, গোল্ডলিপের প্যাকেট ছুড়ে আমি কেড়ে নেই ক্যাপাস্ট্যান।

 

কবি আমি এবং মহত্বম একজন, বিষদাঁতে চিনে নেই রক্তের কামড়।

 

ভূতগ্রস্ত নভচারী হাতের সময়ে

 

ভূতগ্রস্ত সময়ে বসবাস করি।

ভুত দেখবার মতো দেখি পাঁচিলের বাঁ চোখ। 

আংগুলে ছেয়ে যায় কপাল কণ্ঠনালী।

এমনকি, হাংরিরাও হয়ে যায় নিয়তিলিপ্ত সাদামাটা প্রাণী।

আমি একটা ভূতগ্রস্ত সময়ে বসবাস করি।  

শুয়ো পোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠা,

কিংবা, নিতান্তই আমাদের শুক্র থেকে মানুষ হয়ে ওঠা,

আমি দেখতে পাই না, কেননা একটা ভূতগ্রস্ত সময়ে বসবাস করি। 

হাসপাতালের বিছানায় হাংরিদের আর বিপ্লবীদের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই।

কবি এবং বিপ্লবী দু'জনেরই প্রয়োজন এখন শারীরিক নিস্তার।

ক্যাপিটালিস্ট এবং কমিউনিস্টরা, যার যার বিজ্ঞাপন ও সংগ্রামের সাথে মঙ্গল গ্রহে গেলে-

এক হাতে হাচড়ে পাচড়ে উঠে আমি চলে যাই পেচ্ছাপ খানায়।

মধ্যরাতের ইমার্জেন্সিতে লিখতে নতুন নতুন ওষুধ খরচ,

আমি হেটে যাই অপরিচিত করিডোরে।

মানুষ জন্ম আর বেড়ালের মাঝে যোগসূত্র আঁকি। ব্যাথায়-

হাসপাতাল কিংবা আমার অগোছালো মেস বিছানার মাঝে খুব সামান্যই তফাত পাউ,

সুন্দরী নার্সের দেওয়া পেইন কিলার নিয়ে আমি দিব্যি দেখে ফেলি দুর্দান্ত বৃষ্টিপাত। 

একটা দুর্দান্ত বৃষ্টিপাতের ভেতর আত্মমগ্ন আমরা বসে আছি।

তবুও বিষণ্ণ কমলালেবুর ভেতর মানুষ জন্ম

নিয়ে, আমরা গড়ে তুলেছিলাম ব্যক্তিগত কোয়ার কলোনি ।

যদিও শুধু ক্যাপিটালিস্টদেরই রয়েছে উন্নত নভোযান। 

মঙ্গল গ্রহে যাওয়া কমিউনিস্ট এবং ক্যাপিটালিস্টদের স্নায়ুযুদ্ধ, কিংবা

আমাদের সময় থেকে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা ফিরে পাবার কথা ভেবে

আমি হাসপাতালে বসে করি খরচের হিসাব। 

আমি একটা হাসপাতালের ভেতর বসবাস করি।

আমি একটা ভূতগ্রস্ত সময়ে বসবাস করি।

  

ট্রমা সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা

 

ফুল নয় বুলেটের উত্তরে

 

আমরা যারা শরীরে বয়ে চলি জীবনানন্দের ভুত,  

রাম নামের বদলে দমে দমে জপি কবিতা। 

দুই কাঁধের কেরামান কাতিবিন লিখে ফেলেছে আমাদের জীবন।

পৃথিবীকে নিয়মিত গাল দিয়ে হুইস্কি খেতে খেতে

বৃদ্ধ ভাঁড়েরা লিখছে শ্বেত বীর্যের হ্যাংওভারগ্রস্ত বিলাতি কবিতা।

আমরা কালো মানুষ, আমাদের ময়লা চামড়া,

গলা অব্দি মহুয়া খেয়ে মাটির কথা শুনি। 

পুর্বপুরুষ মহিষাসুর পরবর্তী সান্তালদের মতো, আনন্দে নাচি- তীর ধনুক হীন।

চোখ বুঁজি- 

"নুসাসাবোন, নওয়ারাবোন চেলে হঁ বাকো তেঙ্গোন,

খাঁটি গেবোন হুলগেয়া হো

খাঁটি গেবোন হুলগেয়া হো।

ধানজুড়ি হে, ঢোল বাজে হে,  

সিদো কানহু চাঁদ ভায়রো, হুলে হুলে।"

 

চোখ খুলে প্রতিবার পৃথিবীর ডিস্টোপিয়া দেখতে পেয়ে আমরা মার্ক্স পড়েছি। 

কুৎসিত আক্রমণের চোখে চোখ রেখেছি পরষ্পরের হাত ধরে-

আমাদের প্রেমিকাদের এবং, সহযোদ্ধার। 

চে, ট্রটস্কি, লেনিন কিংবা রোজা লুক্সেমবার্গের কথা শুনে- 

বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি একদিন। 

বুলেটের উত্তর ফুল দিয়ে দিতে আমরা শিখিনি,

তবু দেয়ালে দেয়ালে কবিতা লেখা যায়, স্টেনসিলে, গ্রাফিতিতে কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়। 

বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে ভেবেছি সেসব কথা। 

ভেবেছি সবচেয়ে সুন্দর কবিতা লিখে ফেলবার পর- 

কেমন দেখাবে সূর্যাস্তের আকাশ। 

একটা কিশোর ছেলের সদ্য সিগারেট ফোঁকা ঠোঁটে ছ্যাকা লাগার মতো হঠাৎ, প্রেমিকা চুমু খেলে- 

কেমন লেগেছিলো তার।

বিপ্লবের রঙ ঠিক কতটা লাল?

তৃতীয় বিশ্ব যতটা রক্ত দিয়েছে তার চেয়েও বেশি লাল

 

বিপ্লবের পর কী করবো ভেবে রেখেছি। 

আমরা কেবল কবিতাই লিখতে চেয়েছি

পিঠে রোদ মেখে দেখতে চেয়েছি বসন্তের গাছ। 

মুক্তির পর একদিন চলে যাবো নদী পাড়ের গ্রামে। 

সাত সকালে নদীর জলে নেমে এসে,

পাখি এবং ফুলেদের সহাস্যে শোনাবো কাদা মাখা  কবিতা। 

রুপসী বাংলার  পর নদীর পাখিরা তেষট্টি বছর কবিতা শোনেনি। 

 

চোখ বুঁজে ছিলাম

খুলে ফেলতেই দেখেছি ডিস্টোপিয়ান পৃথিবী

যেমনটা দেখেছি প্রতিবার। 

আমরা যারা কালো মানুষ, শরীরে বয়ে চলি জীবনানন্দের ভুত- 

শ্রেণিহীন সমাজের খোঁজে বন্দুকের সামনে দাঁড়াই। 

কতগুলো ফুলকে কবিতা শোনাবো বলে

লেনিনের বিপ্লবেই আমরা খুঁজছি মুক্তির পথ। 

বুলেটের উত্তরে ফুল ছুঁড়ে দিতে আমরা শিখি নি। 

"বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।" 



 

 

 

 

 

 

 

 

 

 
কায়েস মাহমুদ
জন্মঃ নোয়াখালী, ১৯৯৬ 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন রত।
 
সমাজ এবং শিল্পের কাঠামো ভাঙতে চাই। বিশ্বাস করি একদিন পৃথিবী হবে সমতার। মানুষ ভালোবাসবে মানুষকে।

 

 

Post a Comment

0 Comments