গোলাপ
আঁধার
ঘরে স্রোতের কাছে চোখ মেলেছে তিস্তা যখন ঘুমের
ঘোরে। খুন হয়েছে রাত্রি
সকল - প্রেমের নামে। হাত বাড়িয়ে গন্ধ
মাখো হৃদয় খুলে কাঁটার আঘাত।
শর্তবিহীন পরস্পরা দাগ
কেটেছে পিঠে। গোলাপ বলে - আমায় নিও। কোনটা নেবে?
লাল, সাদা, না কালো।
তোমার
তখন সঙ্গী ছিল। সবুজ ডালে ভ্রমর ছিল। বোকা
প্রেমিক ভুল করেছে - হ্রেষা
ধ্বনি তুলে। মঞ্চ থেকে ডাক
এসেছে বিরান পথটি ভুলে। বাগান মালী জানে -
গোলাপ চাষে
তুমুল প্রেম পকেট ভর্তি থাকে।
ছুঁতে গেলে পুড়তে হবে ভীষণ আগে।
নুজহাত, মৌরিফুলের মর্ম বুঝেনি
বৃত্ত
থেকে দূরে - বুনোফুলের বনে - হাঁটতে যদি সাথে -
মৌরিফুলের মর্ম তুমি -
স্পর্শ পেতে। হাত বাড়িয়ে দেখো - শ্রাবণ
ধারার কাছে - গোপন বাতাস নিরব বনে
পাহাড় বাইতে জানে।
একদিন
মেঘ - ঝরে পড়ে ঘাসে - সবুজে মাতে প্রাণ - বুকে মাঝে
সরাইখানা - ঝকঝকে
রৌদ্দুর। নিরাপত্তার লোভে - ভুল সময়
নিঃস্ব হলে - ডুমুরাক্রান্ত হয়ে।
তুমি এক অদ্ভুত খাঁচা। তোমার রূপ-রাজপ্রাসাদ খাঁ খাঁ।
পাখিদের সংসারে তুমি শূন্য, তোমার কল্পিত ডানা খসে গেছে অহংকারে।
ইঁদুর চাষ
সঞ্চিত
আয়ু। মোজা ভর্তি বার্লি, ঘাম, ক্লান্তি জড়াজড়ি করে
বুনছে আহার - বসবাস।
স্তব্ধ রাত - টিকটিক - কুটকুট। দাঁতে
বাড়ছে তীক্ষ্ণতা। আয়ু কাটছে। বাড়ছে
শরীর, পেট। শর্করা
জমছে - জানা দিচ্ছে ম্যারাথনের সিগন্যাল।
বংশীবাদক নই। উৎপাদনে আহার। স্তবক আওড়াচ্ছে
কাস্তে হাতে কৃষাণী। সুষম বন্টন নীতি বলছে -
এসো ইঁদুর চাষ করি।
শ্যালো মেশিন, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ও শ্বেত কুকুরের গল্প
একটি মন্দাক্রান্ত বিকেল নেমে আসে ধূলিময় রাস্তায়
অচেনা পথিক কতেক হেঁটে গেছে চাদর কাঁধে অদূর হাটে।
লিলুয়া উত্তরীয় বাতাস ধেয়ে আনে ওম, ক্ষুধা। গেরস্থ -
হাটু জলে ক্ষেতে বুনে যায় সোনালী দানা'র চারা গাছ।
বকপাখি উড়ে যায় নীলিমায়। নৈঃশব্দ ছিঁড়ে ডেকে ওঠে
শ্যালো মেশিন, ডুবন্ত ব্যাঙ - ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
এখানে, নিঃসঙ্গ নির্জনতায় শ্বেত কুকুর সঙ্গী। দূর...
থেকে ভেসে আসে হাঁক। রোদ পড়ে যেতে যেতে...
তেলের চুলোয় ফুটছে আভিজাত্যহীন সহজ চা।
মুঠো ভর্তি ফসল, বুক ভরা বিশুদ্ধ অক্সিজেন, চোখ জুড়ে
স্বপ্ন।
সারল্যের পথে হেঁটে যেতে যেতে বাড়ে আকুতি, চক্ষু জুড়ে
তুষ্ণা।
কলমি ফুলে লেগে থাকা শৈশব, হাঁসের প্যাক প্যাকে দূরন্ত
জীবন্ত হয়ে ওঠে -
পাখির বাসা খোঁজার দিন। টায়ার ঘুরানোর দিন।
বাঁদুর ঝুলা, গোল্লাছুট, কাদা মাখামাখি - জ্বর,সর্দি,
অসুখ।
সন্ধ্যে হলে পড়তে বসা, হারিকেনের আলোয় হাই তোলা।
নেমে আসে নিশীথ ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জনে ক্রমাগত...
মাটির কাছে শোনা যায় শেকড়ের গান। স্তব্ধ দিগন্ত
থেকে ভেসে আসে শ্যালো মেশিনের আওয়াজ। টুপ...
টুপ শিশির টিনের চালায় হৃদয়ের স্পন্দন শোনা যায়।
দূরে...শ্যালো মেশিনের আওয়াজ,
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ভেদ করে
আসে নিস্তব্ধতা।
নিঃসঙ্গ নির্জনতায় সঙ্গী কেবল শ্বেত কুকুর।
জন্ম থেকে জন্মান্তরে
ছাতিমগাছের নিচে বয়েস গুনছে যে_
সে হাতে নাড়ী কেটে জন্মোৎসব আরম্ভ।
জন্মের পরেও যে জনম তার ঘুম:
তৈল প্রদীপে নৃত্য করেছে আগমনী ক্রন্দন।
ছাতিমফুল নুয়ে পড়ছে আরাধনা সঙ্গীত।
মেহফিল-ই-শোকরান গাইছে বাঈজী।
নিজস্ব প্রেমিকা না থাকার ক্ষোভে ঈশ্বর
ললাটে আজন্ম বৈরাগ্যের রব এঁকেছেন।
মাতৃদুগ্ধ পুষ্ট সাবক গোবি'র বুকে ত্রাস করছেন বলে_
শরাবের অভাবে চৌচির হয়ে আছে প্রেমিকার নাভী।
কক্ষপথ বেয়ে আরেকটি হিম জড়ানো প্রভাত।
আয়ুরেখা অঙ্কে বাড়ছে দাবানল পুড়িয়ে ফুসফুস।
ক্রন্দন-হাসি-ক্ষুধা-চিৎকার-যু দ্ধ-দূর্ভিক্ষ-কাঁটাতার
সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে মুমূর্ষু প্রসবকালের যন্ত্রণা।
রক্ত আর জন্মের ঋণ শোধ করা যায় না বলে_
মানুষ কেবল সাঁতরে বেড়ায় প্রেম সায়রে।
ক্ষমা করে না প্রকৃতি পাপাচার।
ছাতিম গাছের নিচে বসে গুনছে যে_
সে হাত
বিচ্ছেদের পরেও মুক্ত করে
জন্ম থেকে জন্মান্তরে।
আমি এক রণক্লান্ত ভেড়া
আমি এক রণক্লান্ত ভেড়া।
উল বুনে ওম নিচ্ছে কতেক জুয়াড়ি।
কাঁপি কামে আর ত্রাসে
বন পেরুলেই চৌকাঠ।
অথচ,
বন্ধ হয়ে গেছে দ্বার।
নিঃশ্বার জুড়ে বারুদের ঘ্রাণ
হাসনাহেনা'র ছায়ায় সাপেদের অপেক্ষা।
নীল ছোবলের পরেও যদি জ্বলে
শিখা।
উত্তাপে তীক্ষ্ণ হবে
আস্তিনে গোঁজা প্রতিজ্ঞা।
পথ জুড়ে তীব্র তমসা
যোদ্ধা জেগে আছে হীমে।
আমি এক রণক্লান্ত ভেড়া
উল কেটে নিয়ে গেছে ক্ষুধার্ত নেকড়ে।
চোখ জুড়ে রক্ত পিপাসা
লকলকে জিবে কাঁচা মাংশের লালা।
নেকড়ে রাজ্যে না নাগরিক, না শরনার্থী।
আমায় টুকরো টুকরো খেয়ে নিচ্ছে
সময়, আক্রোশ, বৈরীতা, দ্বিচারিতা।
কালভার্ট
বহুদিন পর এসেছি এখানে। রজনী জুড়ে যারা সঙ্গী ছিল মদ
আর মাংশ ভোজনের।
তারা মূলত জড়িয়ে গ্যাছে জৈবনিক দ্বন্দে। নিস্তব্ধতার বুকে
জড়িয়ে পড়েছে নিঃসঙ্গতা।
এখনো দু-এক পথিক হেঁটে যায় আলপথ ধরে। আঞ্চলিক
হাইওয়ে পেরুলেই কাঁচা রাস্তা,
সোঁদা মাটির গন্ধ, বিস্তৃত ধানক্ষেত, তালগাছ, আলপথ, মাছের
বেল*, মাঝারি খাল,
একটা কালভার্ট।
বিকেলের শুভ্র বক, দূরের কুয়াশা,পাণকৌড়ি __
সন্ধ্যেরা হেঁটে যায় ঝিঁঝিঁ পোকার সঙ্গীতে __
মাছ শিকারীর খুপরি'তে কুপি জ্বলে নিম নিম......
বিশাল নিস্তব্ধতার মাঝে একটুখানি সম্ভাবনা।
হতে পারতেম যদি কুপি'টা
কিংবা
তারা খসা রাতের কুয়াশা
অথবা
বিকেল জুড়ে পাণকৌড়ি'র নীড়ে ফেরা।
*মাছের বেল - বাঁশ ও জাল দিয়ে তৈরী ত্রিকোণাকার মাছ ধরার ফাঁদ।
ক্যাবারে
সন্ধ্যে
নামলে জেগে ওঠে বিলাসী বকুল - মেঘ ভর করে তৃষিত
হৃদয়ে। কাকতাড়ুয়ার
ক্যানভাসে মিশে থাকে - সহস্রাব্দ
ইতিহাস। ক্যাবারে বেজে ওঠে - মখমলে ঢাকা
খুন। ভুলে যেতে
চাই রক্তাক্ত বেদনা - অ্যালকোহলিক সুরে।
এখানে,
আমরা ক্ষুধা মিটাতে চাই:ক্রেতা বিক্রেতা।
বিষাক্ত ছোবলে নীল হলেও -
মনোরঞ্জন প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা।
পাপবোধ-অপরাধ-ঈশ্বর ম্রিয়মাণ এখানে,
উজ্জল শূন্যতার বুক।
ক্যাবারে - ২
নিজস্ব
কফিন বয়ে বেড়ানোর নেশায়_ এসে পড়েছি রূপান্তরিত
বিষাদে। ক্যাবারের পাইপ
ছুঁয়ে যারা তুলে আনছে ঘুর্ণি। তারা
ঈশ্বরের খুব সন্নিকটে ছড়াবে সৌরভ। তাদের
ঘাড় বেয়ে নেমে
আসছে স্বর্গীয় খুন_ শরাবের গ্লাসে শীতল বরফ মেখে গেছে
রক্ত।
রক্তের সাথেই আজন্ম জমে উঠেছে প্রেম ও বিষাদ।
প্রেমিকার বক্ষ জুড়ে
রক্তাক্ত খুন এঁকে তুলছে রাষ্ট্র। তার বুলেট
বেরিয়ে আসে ধনতান্ত্রিক লালসার
স্প্রিংয়ে _ লুপ্ত হয়ে আসছে
ডেমোক্রেসি। ক্লিভেজ জুড়ে আফিমের উল্লাস_
ট্যাটু জ্বলে ওঠে
বিপ্লবের স্লোগান হয়ে। কয়েক টুকরো আঙ্গুল তুলে রেখে
_শরাবে, রক্তে তৈরী হচ্ছে আরও একটি স্কেচ। যেন, আমাকেই
বলছি - কফিনের
চা-পাতাগুলো তুলো রাখো। টবে চাষ
করবো জুঁই ফুল। তার কোমরে মাতম করবে বেইলি
ড্যান্স_ সুর আর
শুরায় মেতে উঠবে মখমলে ঢাকা খুন।
কুক্কু-রুত কুক
কলতলায় জলের শব্দে বুঝতাম -
তাহাজ্জুতের সময় এখন। মৃদু হারিকেন
আলো ছড়ায়ে আবছায়া খেলে
অন্ধকারে
রাতের শেষে
শিশিরের শব্দ পড়া যায় পৌনঃপুনিকতায়
টিনের চালায়
ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে রূপালি চাঁদ।
কপাট পেরুলেই শুকতারা জ্বলে
দূরে নক্ষত্রের দেশে।
দাদু বলতেন, ঐ দেখ আদমের কবর।
তারাগুলো সাজানো এই ভাবে -
উপরে ডানে
শিয়রে
বামে নিচে
পয়গম্বর, বেহেস্ত, আদম-হাওয়া, পুলসিতার
হাসান-হোসেন, কারবালা, কাঁটাওয়ালা বুড়ি...
জলচৌকি'তে বসে আমরা শুনতাম মুগ্ধ হয়ে;
জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদ থেকে এশা
তসবিহ জপতেন।
আঁধারে জ্বল জ্বল জ্বলে সাদা তসবিহ।
নুর বলতে তখন -
সাদা তসবি
এবং
রূপালি চাঁদ।
আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম
আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে পোষা মোরগ
কুক্কু-রুত কুক। কুক্কু-রুত কুক।।
0 Comments