সাজ্জাদ শাকিলের কবিতা


১।

থামো—
এই যে শিরদাঁড়াহীন সমাজের ঠ্যাঙে
নিত্যদিন চুইয়ে পড়ছে পুঁজির থেঁতলানো থুতু
তুমি সেখানে প্রেম খুঁজতে যাও কেন?
এই পাণ্ডু প্রেম 
জামাকাপড়ের মতো বদলায় রাত্রির ঘ্রাণে—
বালিশে পড়ে থাকে প্রস্রাবমাখা
বিপ্লবের পোস্টকার্ড!
কবি, চুদিও না এতো
তোমার ভাষা রাষ্ট্রের গুদে
যেভাবে চুদে জনগণের স্বপ্ন
নির্লজ্জভাবে হয়েছে ক্ষয়
ক'টা টাকার জন্য শব্দ বিক্রি করো
রাশি রাশি অনুর্বর বই পড়ো, লেখো—
তুমি তো শালা কলম চোষো
কিন্তু চোষা শেখোনি দমবন্ধ শব্দের তীব্রতায়!
জিভে রয়ে গেছে চায়ের দাগ
অন্যের পকেট কেটে
ফাঁকা দর্শনের বুলি আউড়াও
এতো বিপ্লব চুদিও না
তুমি এখনও রিভলভার চালাতে জানো না
তোমার কবিতা এখন—
একটা রাবার কনডমে ভরা মৃত পিপঁড়া
যেটাকে রাষ্ট্রপতির প্রেস রিলিজে
"সাহিত্য" বলা হয়।
অথচ আমার কবিতা যেন
বিবস্ত্র মায়ের ঘুমন্ত স্তন
যাকে দেখেই
চুলকায় সেনা-অফিসারের বিবেক...

২। 

হে আমার ব্লু হামিং বার্ড, 
সুরললিত স্মৃতি ছেঁকে
তুলে আনো প্রলম্ব আয়ু
সেইসব জ্যামিতিক কোমলতায়
যারা দিয়ে গেছে বিদীর্ণ হৃদয় কিংবা 
এসে ফিরে গেছে আপন শোভিত নীড়ে: 
তাদের শূন্য ঝুলিতে ছিল না কখনো জ্যোৎস্নার আভা
আরোগ্যহীন জাহাজ কী করে সারাবে ক্ষত?
এক প্রজ্ঞাহীন চেতনরোধী চাপা শ্বাসকষ্টে
তুমি আর আমি অনন্তকাল কী বয়ে যাব 
মৃত্যুময় সামাজিক আচারি-ব্যাধি?
না কি দুর্জ্ঞেয় কোনো অসহ্য ইন্দ্রিয়লোপ বিয়োগে
নিঃশেষ করব বিশুদ্ধ চেতনার করোটি!
এই জেনে প্রতিদিন ঘুম যায় সারসের বেশে উড়ে
ফলত হৃদয় নিংড়ে বেরিয়ে আসে উজ্জ্বল মঞ্জুরিত শ্বাস!
আর আমি এবং তুমি একই সত্তাগত আত্মা 
একাকার হয়ে যাই ঈশ্বরের বিমূর্ততায়, ততোধিক অনলে
এরপর একদিন আমরা প্রতিপ্রেমের চুল্লীতে আলো হয়ে ফুটব
যেখানে সমাধিস্থ হবে রাশি রাশি শূন্যতার বিস্বাদ...

৩। 

কোন মর্মমূলে ঝরায় সিঁদুররঙা বিয়োগ
অখন্ড পাঁজরে কিংবা বিধৌত গোলাপজলে
উজ্জ্বল মঞ্জুরিত ড্যাফোডিল হেঁটে যায়
হৃদয় কার্নিশ ছুঁয়ে শরৎপ্রবাহ ছায়ার বিকেলে
আমিতো নিজেই নিজের বিদগ্ধ হন্তারক 
সিদ্ধান্তলীন আগুনের হল্কার ভেতর
তামাম নিষ্প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রত্যহ
ছেড়েছি, ছেড়ে যাই নিজের শরীর! 
অতঃপর একদিন সমাধিফলক চুইয়ে
তুমি এলে সহস্র নীরবতার অলক্ষ্যে 
দাঁড়ালে— হে পরাজিত মানবী! 
পূর্ণ বিষাদের ক্লেদ ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত বেদে
যে ক্যানভাস থেকে অজ্ঞাত শূন্যতার রঙে
আমাকে জাগিয়ে তুললে নিদ্রাহীন মনোজগত থেকে
সেইসব রাতের আরক্ত মঞ্জিল তবে কী শূন্য রবে?
তবে কী অনন্ত শূন্যতার ভাইব্রেশনে দুলে উঠবে
প্রাগৈতিহাসিক প্রেম, উন্মাদনা কিংবা প্রবল বিরহীকাজরী! 
জানি নেই হয়তো জানতে নেই মৌন পলায়ন!
নচেৎ প্রাণহীন হিমশীতল হাওয়ায় কী আমি ভাসতে পারতাম...



Post a Comment

0 Comments