মতিভ্রম
সাঈদ বাপ্পী
অনি তার বন্ধুদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে, তার কাছে মনে হচ্ছে বন্ধুত্ব ব্যাপারটা আসলে একক ধরনের পরনির্ভরতা মানসিকতা থেকে গড়ে ওঠে। মানুষ মূলতো বৃক্ষের মতো সংসারে করতে অক্ষম। সে আসে এক ; যায় একা, তবে মাঝে কেন এতো বন্ধ ছিন্ন করা আদ্র রজনীর মুখামুখি হবে সে। মা কি কখনো সন্তানের বন্ধু হতে পারে? তবে মা কেনো একা একা চলে গেলো। আচ্ছা মা নিয়ে তো পৃথিবীতে অনেক গল্প আছে, যেমন আনিসুল হকে মা, সেই মা অনেক বছর ধরে ভাত খায় না, আসলে মানব জীবনে ভাত খাওয়াটা কি খুব জরুরী। অনি মনে করে ভাত নদীদের খাদ্য হলে ভালো হতো। নদীর স্রোতের মতো সাদা সাদা দানা গুলো ভেসে ভেসে মিশে যেতো অন্য নদীতে কিংবা সমুদ্রে। অনি যদি আবার জন্ম নেয় তাহলে সে ঘাস হয়ে জন্ম নেবে, কারণ ঘাস গরুদের মহাকাব্যিক খাদ্য, সেই ঘাস চুরি যায় না, গুদামজাত হয়ে অনাহারী মহামারী সৃষ্টি করে না। এসব ভাবতে ভাবতে অনির ম্যাচেনজারে একটা বার্তা এলো, বার্তাটি পাঠিয়েছে যে তার নাম হ্যানিম্যান। হ্যানিম্যান শব্দটি দেখে তার মনে পড়লো সে হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশুনা করছে। হ্যানিম্যান নাকি শেষ জীবনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলে, তবে এ কথার সত্যতা নিয়ে তার মনে আছে অনেক দ্বিধা। এমন আরো একজন ব্যক্তির নাম সে জানে যিনি শেষ জীবনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো, সে লেখকের একটি বই সে পড়েছিলো, বইটার নাম ছিলো " ইভান ইলিসের মৃত্যু "। এ ধরনের বই বাবার আলমারিতে বেশি পাওয়া যায়।
তার চোখের সামনে শুধু একটা ছবি ভাবছে ; সে ঘাস হয়ে জন্মেছে, আর একটি গরু তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।
ধিরে ধিরে অনির মনে হচ্ছে সে আর্সেনিকের রুগী। আর্সেনিকের সকল লক্ষণ তার মধ্যে আছে। তার চিন্তা গুলো স্থির না, তার শরীরের ও মনের ভেতর ভীষন অস্থিরতা। আবার একশো বছর অন্ধকারে বসে থাকলেও তার কিছু মনে হবে না। কারণ সে ভাবতে ভালোবাসে। এই যেমন ইতিহাসের সত্যতা ও কোয়ালিটি তাকে মাঝে মাঝেই ভাবায়। অথচো ইতিহাসের কোন ইতি কিংবা আদি কথা সে কখনো পড়েনি। ইতিহাস বলতে সে শুধু একুটুই জানে সিনকোনা নামের এক গাছের ছাল থেকে হ্যানিম্যান প্রথম ঔষুধ আবিষ্কার করেছিলো। তাহলে ইতিহাস নিয়ে কেনো তার এতো সংশয়? হ্যানিম্যান ম্যাচেনজারে বার্তা পাঠিয়েছে " এক রোগী ঘোন ঘোন হাত ধুচ্ছে, কোথাও কোন আবর্জনা বা ময়লা দেখলে সে সহ্য করতে পারে না, পরিষ্কার করার জন্য ছুটে যায়, এ রোগের কি কোন ঔষুধ আছে " অনি উত্তরে লিখলো " Thuja 1m "।
অনিদের দরজায় কলিং বেল বাজতে শুরু করলো, গেটে খুলে দেখলো অনির বাবার সাথে একজন মাঝ বয়সী লোকে এসেছে। জানা গেলো একটা সমস্যা নিয়ে সে অনির সাথে কথা বলতে চাই। লোকটি অনির পড়ার চেয়ারে বসে কোন রকম ভুমিকা ছাড়া কথা বলতে শুধু করলো " এক রাতে আমার মা আমার বাবাকে হত্যা করে অন্য পুরুষের সাথে পালিয় গেলো, এ ঘটনার পর আমি মোটই ভেঙে পড়েনি, বিষয়টা আমি স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছিলাম, তবে আমার বিয়ের পর কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ আমি আমার মাঝে খুজে পাচ্ছি, আমার ভিতর সব সময় এক ধরনের মৃত্যু ভয় কাজ করছে, এই বুঝি কেউ আমাকে মেরে ফেলবে, এছাড়া আমার অর্ধাঙ্গিনী সৎ ও চরিত্রবান এমন প্রমান অনেক বার পাওয়ার পরও আমি তাকে যথেষ্ট সন্দেহ করি, বিষয়টার জন্য মাঝে মাঝে আমাকে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। এই বিষয়টা থেকে আমি মুক্তির পথ খুঁজছি, তুমি কি আমাকে এ বিষয়ে কোন সাহায্য করতে পারবে? অনি বল্লো " বিষয়টার যদি কোন সমাধান খুজে পাই তাহলে আপনাকে অবশ্যয় জানাবো, আপনার কনটাক নাম্বারটা রেখে যান।
রাতে খাবার টেবিলে বসে বার বার হাত ধুয়া রোগীর বিষয়টা অনির মনে পড়লো, অনি বাবার সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। বাবা বিষয়টা ল্যাডি ম্যাগবেথের সাথে তুলনা করলেন, এছাড়া নোংরা জিনিস সহ্য না করতে পারাটা ক্লোসটোফোবিয়া রোগীর লক্ষণ বলে দাবি করলো। এমন একটি চরিত্রের উদাহারণ ও তিনি দিলেন, দ্যা কেয়ারটেকার নাটক থেকে। তবে সবসময় মৃত্যু ভয় কাজ করাটা এক ধরনের স্নায়ু দূর্বলতা ছাড়া আর কিছুই না। তিনি মনে করেন এ ঘটনার সাথে লোকটার বাবার মৃত্যুর কোন যোগসূত্র নেই "। পরের দিন সকাল দশায় লোকটা আবার আসলো। অনি তাকে প্রশ্ন করলো " আচ্ছা আপনি কিভাবে বুঝলেন আপনার বেটারহাফ সৎ ও চরিত্রবান" । জবাবে লোকটি বল্লো " আসলে আমি একটি পুতুলকে বিয়ে করেছে, তার সাথে সংসার করি "। এ কথা শোনার পর অনি বল্লো " পৃথিবীতে সব লোক সংসারে শোভা পাই না, আপনি আরো তিন দিন পরে আসুন " ।
এখন অনির ভেতরে মৃত্যু ভয় কাজ করছে, তার কেন জানি মনে হচ্ছে তার বাবা তাকে হত্যা করবে। এ চিন্তা সে কোন ভাবেই মাথা থেকে দূর করতে পারছে না, তার চোখের সামনে শুধু একটা ছবি ভাবছে ; সে ঘাস হয়ে জন্মেছে, আর একটি গরু তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।
0 Comments