জেন্ডার এবং ফোকলোর || জাফর জয়নাল


জেন্ডার এবং ফোকলোর

 মূল লেখকঃ  মনিকা লোটন 

রুপান্তরঃ জাফর জয়নাল
ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সবসময় পুরুষত্ব এবং নারীত্ব কে ভারণ করে প্রকাশিত হয়। ফোকলোরের ভিতর প্রকাশিত হয়- ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক এবং গোষ্ঠীগত আচরণ; সামাজিক এবং ব্যক্তিগত আচার; ভাষা এবং গান; সংগীত, খাদ্যাভাস; প্রথা; দেশিয় নির্মাণ প্রকৌশল এবং গৃহী পরিবেশ; এবং ধর্ম এবং বিশ্বাসের অন্যান্য মাধ্যম ( যেমন-চিকিৎসা, রাজনীতি এবং অন্যান্য মতামত)। পুরুষ এবং নারীর মাঝে কিছু নির্দিষ্ট পার্থক্য আরোপ করে থাকে ফোকলোর। কিন্তু শারীরিক গঠনই একমাত্র কারণ বা উপাদান নয় এই জেন্ডার বিভাজনের। জেন্ডার প্রকৃতিপক্ষে সামাজিকভাবে নির্মিত, যেটি একটি সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে তৈরি হয়েছে। জেন্ডারের শ্রেণিকরণ আসলে নির্ভর করে সাংস্কৃতি বিভিন্ন সূচক থেকে, যেমন- আকৃতি, শোষণের তাৎপর্য এবং একগুচ্ছ প্রত্যাশা থেকে। জেন্ডার এমতাবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় চিন্তাগত শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে। এটি মাঝে মাঝেই আলোচনায় চলে আসে। বেশিভাগ সময় এটি মানুসের মাঝে বিভাজনের রেখা টেনে থাকে এবং এটি পরিচিতিও তৈরি করে। এটি অন্যতম একটি মৌলিক উপায় পৃথিবীর নাগরিকদের আলাদা করে এবং আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে বোঝার জন্য।

ফোকলোর, সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবপ্রকাশক মাধ্যম, শুধুমাত্র সংস্কৃতির গঠনগত অবয়ব নিয়ে কথা বলে না ,তার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় । এটি আমাদের সাহায্য করে সমাজের আচারগুলোকে নিয়ে যা আমাদের নির্দিষ্ট ধরনের সংস্কৃতিকে বুঝতে সাহায্য করে যা নারী এবং পুরুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। নির্দিষ্ট ধরনের ফোকলোর আসলে আমাদের সামনে যে পার্থক্য তৈরি করে তাতে আমরা সংস্কৃতির ভিতর আসলে জেন্ডারের পার্থক্যগুলো উপলদ্ধি করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, প্রকাশধর্মী আঙ্গিক ( যেমন- ভাষিক আচারণ, বস্তুধর্মী সংস্কৃতি, এবং গতানুগতিক আচারণ) এর রয়েছে নির্দিষ্টধরনের জেন্ডারগত বিভাজন।  যুক্তরাষ্ট্রের ভিতর ধাত্রীবিদ্যা, নারীদের শোকগাথা, কাঁথা তৈরি , কথা চালানী, খাদ্যাভ্যাস, সই পাতানো, ব্যক্তিগত কাহিনি বলা, শোকগাথা গাওয়া, ডিম নকশা করা, যিশুর জন্ম সংক্রান্ত গল্প, ভবিষ্যৎবর্ণনাকারী মরমন নারীর বয়ান, এবং পারিবারিক স্তোবকগান কখন সেটা সামাজিকভাবেও হয়ে থাকে। ফোকলোরিক উপাদানগুলো আসলে আমেরিকান নারীদের সৃজনশীল চিন্তার জায়গা, তাদের পেশাগত জীবন এবং কাঠুরের জ্ঞান, অগ্নিনির্বাপকদের জ্ঞান ,ট্রাক ড্রাইভারদের জ্ঞান, পুলিশ, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ড্রাইভার, রাখাল বালক, অশ্বচালক, বিবাহের পত্র নকশাকারক; সম্মোহনী চিহ্ন নকশাকারক; ফাঁদ নকশাকারী; নৌকা প্রস্তুত করা; পাথর এবং কাঠ নকশা করা ; শেয়াল শিকার করা; কৌতুক বলা, ধর্মপ্রচার করার কৌশল; মদ্যপান করা ইত্যাদি হলো আমেরিকান পুরুষদের স্বাভাবিক সৃজনশীল ক্রিয়াকাণ্ড।

আমেরিকান সমাজে, জেন্ডার একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখে সংস্কৃতির নানান আঙ্গিকে, এর ভিতর যেমন আছে- টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা, থিয়েটার, সংগীতে, সংবাদপত্রে, সাময়িকীতে এবং বিল বোর্ডগুলোতে। একক লিঙ্গের ক্ষেত্রে আমেরিকান কালচার যে নিয়ম উপাদান এবং বলবৎ করছে, বিশেষত পুরুষের ক্ষেত্রে, কর্তৃত্ববাদী ধারণার আদর্শিক রূপ জন্ম দিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে ,নারীদের রয়েছে প্রতিবাদী ভূমিকা রয়েছে আদর্শিকভাবে। নারীবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকার আহ্বান করে আসছে প্রতিবাদের, বিশেষত পুরুষ কর্তৃত্ববাদীদের বিরুদ্ধে এবং যেখানে শুধুমাত্র একমুখী পুরুষ কর্তৃত্ব চলে প্রতিদিনের জীবনে এবং অধ্যয়নবিষয়ক পাণ্ডিত্য প্রদানের ক্ষেত্রে। চেষ্টা থাকে উভয় লিঙ্গের ভিতর একটি ক্ষমতার ভারসাম্য করা এবং নারীদের কণ্ঠস্বরকে বাইরে নিয়ে আসা জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনায়, জেন্ডার বিষয়ে পণ্ডিতরা আলোচনার সময় আমেরিকার সংস্কৃতিতে জেন্ডারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। জেন্ডার চিন্তা আসলে মৌলিকভাবে সম্পর্কিত ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে। পন্ডিতরা মূলত এই আলোচনার মাধ্যমে ফোকলোরবিদদের পথকে আরো বেশিমাত্রায় ক্ষমতা এবং জেন্ডার নিয়ে আলোচনা করতেন ,যা পরিচয় জ্ঞাপক হিসেবে কাজ করত। চিহ্নিতকরণ এবং ব্যাখ্যা করার বিষয়ে শ্রেণিকরণ করার মাধ্যমে মাঠসমীক্ষার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

নারীবাদী ফোকলোরবিদ বিতর্ক তৈরি করে যে, পিতৃতন্ত্রী শাসন কাঠামো, মানসিক আধিপত্য এবং পণ্ডিতিপনামূলক বিষয়তালিকা, সবগুলো বিষয় জেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত, আলোচনার পথকে আর বেশিমাত্রায় সুগম করা জ্ঞানশাখা হিসেবে ফোকলোরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে। নারীবাদী, পুরুষবাদী এবং শ্রেণিবিন্যাসতন্ত্র পেশাগত দিক থেকে, অবসর,ধর্ম,পরিবার, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সংস্কৃতি পরিচালিত হত পুর্নজাগরণ আনয়ন করে ফোকলোরের মাঠসমীক্ষা এবং ফোকজীবনে অবগত হয়ে নতুন ধারনাগত জেন্ডার আলোচনা এগিয়ে যায় । নতুন চিন্তাবিদগণ ঝোকথাকে আলোচনা প্রসারের দিকে যে আমাদের আসলে বোঝা উচিত ফোকলোরের কোন আঙ্গিকটির কত গুরুত্ব। উদাহরণের জন্য বলা যায়, কথাচালানো বিষযটি নারীদের ক্ষেত্রে একটি গতানুগতিক এবং অগুরুত্বপূর্ণ নারী ভাষ্য, যেটি ফোকলোরবিদদের কাছে একটি একক মেয়েলী অভ্যাস প্রতিদিনের জীবনের ক্ষেত্রে; যেটি নাকি পুরুষের শ্রেণিবিন্যাসধর্মী আলোচনার কাছে খুবই নিম্নধর্মী। অতিরিক্ত, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় কাহিনি বলার কৌশল চিহ্নিত হয় জেন্ডার যেটা কিনা আমেরিকায় একধরনের যোগাযোগ উপায়, জেনারের ভিতর দিয়ে মানে তৈরি করে, প্রথম এই বিষয়টি চিহ্নিত হয় ১৯৭০ সালের দিকে যে, পুরুষ এবং নারীর পারস্পারিক যোগাযোগ নেরেটিভ আসলে আলাদা। যখন একজন পুরুষ গল্প বলেন তখন তাতে একই রকম হলেও তাতে লম্ব কাহিনি থাকে এবং বিনোদনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, অপরদিকে নারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো বলায় হযে থাকে উপদেশ দেওয়ায় উদ্দেশ্যে।

কাজটি করা হয় একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ শক্তিশালী ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় নারী যাজকের নিকট পুষ্পার্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার ওহাও অঞ্চলে। নারীরা তাদের মৌখিক পরিবেশনার মাধ্যমে গোষ্ঠীগত জীবনের আনন্দদানে সচেষ্ট হয়ে থাকে। এই পরিবেশনাটি নারীরা নিজেদের সম্মতিতেই করে থাকে , যার মাধ্যমে তারা ভেঙে দিয়ে থাকে মৌলবাদী খ্রিষ্টানিটিকে যা আসলে চার্চের সঙ্গে সম্পর্কিত না। এই নারীরা ধর্মী শক্তিগুলোকে ভেঙে ফেলে ধর্মীয় সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে , পুরোপুরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে যেটি বরাবরই নাকচ করে ঐতিহ্যগতভাবে। যেমন- তাদের এই অংশগ্রহণ আসলে সমালোচনারই নামান্তর যে, এই সংস্কৃতি একপ্রকার নাকচ করার সংস্কৃতি ধর্মীয় উপাদানগুলোকে। এটি আরো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে আসে প্রোটেস্টাইন খ্রিষ্টানিটিতে ,কারণ এই নারীরা নিয়মের বাইরে বসবাস করে থাকে ,তারা সক্ষম এবং আর্শীবাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন ,তাদের ইশ্বরের ধর্মপ্রচারকদের কাছে থেকে এবং তাদের গোষ্ঠীগত ধর্মপ্রচারকদের থেকে।

লোকজীবনের ভিতর দিয়ে আমেরিকার মানুষজন তাদের নিজের আত্নপরিচয খুঁজে পায় যে , তারা আসলে দুইটি জেন্ডারে বিভক্ত, আদর্শিক সাংস্কৃতিক আচার তৈরির ভিতর দিয়ে নারী এবং পুরুষ নিজেদের আরো বুঝতে পারে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে , আচারিক জীবনের ভিতর দিয়ে আসলে তাদের জীবনের প্রত্যাশাগুলো প্রকাশিত হয় , যেখানে জেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করে থাকে।

সবচেয়ে ভালো উদাহরণটি পাওয়া যায় সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জেন্ডারের বিষয়ে আমেরিকান বিবাহ অনুষ্ঠানগুলোতে। জেন্ডার যে প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিকভাবে নির্মিত একটি বিষয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের পারিপার্শ্বিক সামাজিকজীবনের ক্ষেত্রে, তার ভালো উদাহরণ তো বিবাহ অনুষ্ঠানগুলো। ঐতিহ্যগতভাবে ,কন্যার পরিবার এবং বরের পরিবার যুক্ত হওয়ার ভিতর দিয়ে আয়োজনটি জেন্ডারে বিভক্ত হয়, এবং এতে বিবাহিত জুটির ভিতর দায়িত্ব কর্তব্য বিষয়গুলো প্রধান হয়ে উঠে। যদিও বিবাহ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় থাকে, অনেকের অংশগ্রহণ থাকে ,যেমন- পরিবারের সদস্যরা, ধর্মীয় পাদরী এবং অন্য ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ, আচার-আচরণ বিষয় বই, এবং ‘বিবাহ বিষয়ক ম্যাগাজিন’ , যা আসলে পুরো আয়োজনকে প্রভাবিত করে সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে । বরকে কন্যার জন্য বিবাহের রাতে গান গাইতে হয়, দায়িত্বপালন করতে হয় সেই রাতের খাবারের , ডলার নাচ করতে হয় কন্যাকে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ( যেখাণে নাকি নাচের জন্য কন্যাকে আগত অতিথিরা ডলার দিয়ে থাকে। কেক কাটা হয় সেদিন, ফুলের তোড়া ছুড়ে দেওয়া হয় এবং বর মোজা বাঁধার ফিতা খুলে ফেলে কন্যার ।এটি আমেরিকার জাতিগত বিবাহ সংস্কৃতি যেখানে জেন্ডারের বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়।

ধর্মীয় বিবাহ আচারের ভিতর দিয়ে পরিষ্কার হয় যে আমেরিকার বিবাহ অনুষ্ঠানে জেন্ডারের গুরুত্ব প্রকাশ পায় এবং  সংস্কৃতি প্রকাশ করে যে, আঞ্চলিক কারণ এবং জাতিগত দাম্পত্য আচার। উদাহরণে বলা যায়, ইউরোপীয় খ্রিস্টান দাম্পত্য আচার, প্রায় দেখা যায় কন্যা বাবা কিংবা নিকট আত্মীয় কন্যাকে এগিয়ে নিয়ে যায় । কন্যাকে চার্চে ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ধর্মীয় বিবাহের ক্ষেত্রে এবং কন্যাকে সমর্পণ করা হয় তার হবু স্বামীর কাছে , যারা কিনা কিছুক্ষণ পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে কিছুক্ষণে ভিতর । ঐতিহ্যবাহী রোমান ক্যাথলিক বিবাহ আয়োজনে, কন্যা চার্চে উপস্থিত হয় এবং প্রার্থনা করে মা মেরির কাছে যেন, ভবিষ্যতে সে কন্যা একজন ভালো স্ত্রী এবং মা হতে পারে। অন্য ঐতিহ্যবাহী সহযোগী রীতিমাফিক আচার পালন হয় জেন্ডার অনুযায়ী এবং ফোক ধর্মীগুলোর নতুন সৃজনগুলো মূলত আমেরিকার নারীদের পবিত্রতা বিষয়ক জ্ঞান থেকে এবং বাড়িতে যে প্রার্থনার জায়গাটা অনেক বেশিমাত্রায় শ্রদ্ধা তথা আন্তরিকতার জায়গা যেটা নাকি নারীদের দ্বারা তৈরি। খ্রিস্টান ঐতিহ্যের ভিতর, এই প্রথাগুলো অনেকবেশি মাত্রায় নারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত যা বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে বেড়ে উঠে প্রার্থনার ভিতর দিয়ে। টেবিলের ওপর, কুলঙ্গির ভিতর , টেলিভিশন সেটের ওপর, ধর্মীয় বিষয়গুলোর ভিতর চিত্র থাকে যেমন- ব্যাপক আকারে উৎপাদিত ছোট আকারের চিত্রে, ব্যক্তিগতভাবে তৈরি এবং নকশা করা চিত্র, ভাস্কর্য, জপামালা, ভালোবাসার চিত্র, ফুলগুচ্ছ এবং ব্রতের মোমবাতি, নারীর প্রকাশমান জীবনীশক্তি যেটি কিনা তার বিশ্বাস এবং তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং গোষ্ঠীর সঙ্গে আর নিবিড়ভাবে। বাড়িতে প্রার্থনা ঘর নির্মাণ, এরপর এটার অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে আমেরিকার খ্রিস্টান ধর্মীয় পরিপ্রেক্ষিত থেকে, প্রমাণস্বরূপ বলা যায় যে, সমসাময়িক পৌত্তলিকতা এবং জাদুবিদ্যা অথবা উকা ধর্ম।
এমন অবস্থায়, নারী এবং পুরুষ উভয় তৈরি করে তাদের নিজ নিজ আত্মিক এবং আচারগত পন্থা নানামাত্রিক উপায়ে, কখন সেটা প্রকৃতি, পরিবার এবং প্রথাগত জীবন থেকে। এই বিষয়গুলো আসলে নির্র্ভর করে জেন্ডারে নিজে পবিত্রতার জায়গা থেকে। কিন্তু, প্রার্থনার জায়গা নির্মাণণে পার্থক্য নয়, জেন্ডার বিষয়টি যতটা প্রকাশ পায় প্রকাশ ভঙ্গিতে নারী এবং পুরুষ ক্ষেত্রে।

কোনো কিছু নির্মাণের বেলায় নারী এবং পুরুষ উভয়ই আসলে সচেষ্ট থাকে সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, আমেরিকার বিভিন্ন সরকারি পাথরের কারিগরি স্থাপনায় , যেখানে পুরুষের ফোক নান্দনিক বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। ভাস্কর, পাথর কারিগর, কাঠমিস্ত্রী ভালো উদাহরণ  পুরুষের সাধারণ জিনিসপত্র তৈরির ক্ষেত্রে, তাদের দক্ষ উত্তীর্ণ হয়ে যায় তাদের জেন্ডারের জন্য। নারী এবং পুরুষ, ফলত, তাদের ভিতর ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্নধারা কিছুটা হলেও প্রবাহিত হয়ে থাকে, জেন্ডারের এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। পুরুষ ঐতিহ্যহতভাবে শিক্ষানবিস থাকে পাথর খোদায়ের কাজে, ইট তৈরিতে এবং বাঁশি বাজাতে, অপরদিকে নারী ঐতিহ্যগতভাবে শিখে আসছে, কাঁথা তৈরির কৌশলসমূহ বাড়িতে থেকে , এছাড়াও সেলভেরিক আমেরিকার পারিশ গোষ্ঠীতে মেয়েরা আমিনের কাজ শিখে থাকে।


যুক্তরাষ্ট্রের গোষ্ঠীগত এবং সামাজিক পরিসরে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয় নারীদের রান্নাবান্নার কাজেই বেশি সৃজনশীল, যেখানে উৎপাদন এবং ভোগের বিষয়টি সংগঠিত হয় জেন্ডারের ভিত্তিতে। ঐতিহ্যগতভাবে রান্নাবান্না সংক্রান্ত বিষয়গুলো নারীদের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকে পড়া পরিবার এবং গোষ্ঠীগুলোতে নারীর সামাজিকীকরণের ভিতর দিয়ে সৃজনশীলতা, সামাজিক মর্যাদা এবং পরিবারের অবস্থানের প্রকাশ ঘটে খাবারের ভিতর দিয়ে। গার্হস্থ্য অর্থনীতির ভিতর দিয়ে আমরা নারীর ভূমিকা দেখতে পাই এবং যুক্ত থাকে পারিবারিক শ্রমবিভাজনের ভিতর দিও। একটি উদাহরণ দেওয়া যায়,  তাজানো 

( টেক্সাসের ম্যাক্সিকান আমেরিকান ) অভিবাসী শ্রমিক গোষ্ঠীর  অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত, অন্বয়ুক্ত , সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক  উপাদানের জন্য স্বামীদের খাবার তাদের গোষ্ঠীর নারীরা প্রস্তুত করে শ্রমিকদের ট্যামেল জাতীয় খাবার। ট্যামেলের প্রচুর উৎপাদনের ক্ষেত্রে নারীদের তাদের গোত্র একসঙ্গে চাপ দেয় কারণ আসলে এটি তাদের জাতিসত্তার পরিচায়ক।

সমস্যাযুক্ত দৃঙ্গি নিয়ে ফোকলোরকে পাঠ করতে চাইলে ,নিশ্চিতভাবে জেন্ডার বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে যে, যেখানে নারী এবং পুরুষ উভয় জেন্ডারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠেছে। সমাজের কিছু কিছু অংশে সৃজনশীলতার সংজ্ঞা খুব পরিষ্কার হলেও কিছু অংশে পরিবর্তনশীল থেকেই যায়, প্রত্যেক জেন্ডারের ক্ষেত্রে এবং জাতিগত ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে । নগর কিংবদন্তি, র‌্যাপ গান, কবিতা আবৃত্তি, জোকস বলা, ক্রাশ-ড্রেসিং, ট্যাটু করা, শরীর শক্ত করা, গ্রাফিতি, ফটোকপি করা এবং কম্পিউটার নির্ভর টেক্সট, এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিক এবং সমসাময়িক ফোকলোর আলোচনার আলোতে এসে পড়েছে। যেমন- প্রথাসিদ্ধ ব্যবহার পুরুষদের ক্ষেত্রে ‘হরিণ’ বিষয়ে পাটি বা উৎসবে অবিবাহিতদের উৎসব এবং ‘চিপেনডেল ক্লাব’( যেখানে উদ্ভট নাচ পরিবেশন করা হয়) যেটির প্রচলন শুরু হয় ১৯৭০ সালের দিকে এবং অপরদিকে রয়েছে অবিবাহিত ঐতিহ্যবাহী দল। একইধরনের, সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্ব জেন্ডার নির্ভর আঙ্গিকে সন্ধান পাওয়া যায় অবসরকালীন কলেজে এবং ইউনিভার্সিটিতে গড়ে উঠা ভ্রাতৃসংঘ এবং ভগিনীসংঘগুলোর দীর্ঘ পরিসরে কখন কখন পান করতে এবং গান করতে যা ছড়িয়ে পড়ে যা মূল বিষয় মাঝে মাঝে হয়ে দাঁড়ায় স্পষ্টভাবে যৌন সংক্রান্ত।

বিচারিক দৃষ্টিতে ফোকলোরের আঙ্গিকগুলোতে পুরুষ এবং নারী উভয়ের ভিতর দিয়ে প্রশ্ন এবং নতুন করে আমেরিকার বাস্তব জীবনে অভিজ্ঞতা এবং ব্যাখ্যার ভিতর দিয়ে এগিয়ে যায়। প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, অস্পষ্ট এবং যৌন সীমানা ভিতর খুঁজে পাওয়া যায় মিশ্র সংস্কৃতির, আমেরিকান গে এবং সমকামী গোষ্ঠীর। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের জেন্ডার প্রত্যাশা যুক্ত থাকে তাদের প্রকাশমান- ভাষায়, পোশাকে, ক্রিয়াকলাপে এবং শারীরিক প্রকাশ ভঙ্গিতে ,যেখানে তাদের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে ঐতিহ্যগতভাবে তা নির্ধারিত থাকে। গে মানুষদের উচ্চারণের ঝোক বিশেষের ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্য’ রয়েছে , পুরুষ সহকামীরা সামাজিক পরিবেশে একজন আর একজন সমকামী পুরুষকে আহ্বান করে - ‘হাতের দুই তালু ঘষা দেওয়ার মাধ্যমে’। তারা পুরুষালী আচার মুছে ফেলে এবং হেয় করে মেয়েলী আচারকে আস্তানায় থেকে থেকে। একটি ভালো অস্পষ্ট জেন্ডার সীমার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে আমেরিকান গে এবং সমকামী গোষ্ঠীর ভিতর , যার সমর্থন পাওয়া যায় এইড্সে আক্রান্তের নামের তালিকা থেকে। এই ধরনের চিহ্ন ইঙ্গিত দেয় আলাদাভাবে মারা যাওয়ার কারণ , তদন্ত করে জানা যায় ইমিউনি ডেফিসেনসি সিনড্রম( এইড্স) এ আক্রাক্তরা মূলত এই ধরনের সাধারণ নারী নির্ভর গণ সম্পর্কে যুক্ত। এই গণ সম্পর্কের অভিপ্রায়ের সৃজন ঘটে প্রাথমিকভাবে পুরুষের মাঝে প্রকৃতি থেকে। প্রাকৃতিক নিয়মে এই গণসম্পর্কের ধারণা থেকেই নিশ্চিতভাবে বলা যায় মৃত্যু হার কমে আনা সম্ভব এই গোষ্ঠীগুলোকে বুঝতে পারলে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জেন্ডার বলয়ের ভিতর আছে মানুষ, নারীর প্রকাশমান্যতায় তার আবেদন এবং ব্যক্তিগত ক্ষতির বিষয়গুলো। প্রকাশের মাধ্যমে আমেরিকার মানুষের প্রত্যাশার অভিপ্রায়গুলোর খোঁজ পাওয়া যায়, কোনধরনের উপকরণ তারা ব্যবহার করছে সেটিও একটি বিষয়। এলাকার স্থায়িত্ব আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং যারা এই যুদ্ধে মারা যায় তাদের আবেদনময় বিষয়গুলো এখানে আলোচ্য। একটি ব্যাপক সংখ্যা এইড্সে আক্রান্তের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে, গণসম্পর্ক পরিবর্তন ঘটিয়েছে আমাদের নারী ও পুরুষের উপস্থাপনার ভিতর দিয়ে, সমকামী এবং ইতররতি প্রবণ জেন্ডার সমস্যা নানান রোগের বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসছে, আশ্চর্যজনকভাবে।

বর্তমানে সমসাময়িক ফোকলোরবিদদের কাছে,  জাতি,বর্ণ এবং শ্রেণি বিষয়গুলোর সঙ্গে জেন্ডার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে , মানব জাতির আন্তঃসম্পর্কের বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করতে গিয়ে। ফোকলোরের উপস্থাপনায় কোন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সাধারণভাবে জেন্ডারের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,কারণ সম্ভাব্য সব উপায়গুলো আসলে প্রভাবিত করে এমনকি সবচেয়ে ভালো জেন্ডার ধারণাও। মাঠসমীক্ষাকারী ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠে এই জটিল উপস্থাপনাময় মানুষদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনকি একই ধরনের যৌন এবং যৌন ঝোঁকের বিষয়ে। মাঠসমীক্ষাকারীর একাডেমিক অবস্থা স্বাভাবিকভাবে তাকে লঙ্ঘন করে যেতে হয় সামর্থ্যরে জায়গা থেকে এককভাবে এবং গোষ্ঠী বিষয়ে যিনি কিনা নিজে ক্ষমতার অধীন। জেন্ডার ক্ষমতার সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, নির্দিষ্ট সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে জেন্ডার যুক্ত হয় নারী এবং পুরুষের সংজ্ঞায়নের দরজায়। এটা বোঝা জরুরি যে, কোন প্রক্রিয়া এবং কীভাবে সংস্কৃতি কাজ করে নারী এবং পুরুষের প্রতিদিনের জীবনে ,এটি খুবই গুরুত্ববাহী ফোকলোরবিদের জন্য এবং যারা প্রতিদিন সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে জীবন অতিবাহিত করছে। নারীবাদী সমালোচকদের থেকে এটা বোঝা যায় যে, নারী বাস করে অতীতের বিদ্যা দিয়ে এবং তার প্রয়োজন নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করা এবং উৎযাপন করা যেটি জাতিতাত্ত্বিক গবেষণার সঙ্গে যায় না যে, মানুষকে পিতৃশাসিত ছকে শ্রেণিকরণ করা। একটু যতনের সঙ্গে নারীর জীবনকে পাঠ করা প্রয়োজন এবং ফোকলোরের প্রকাশ ভঙ্গিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন পুরুষের সংস্কৃতি বোঝার অপব্যয় রোধে এবং পুরুষ ফোকলোরের বিষয়ে এবং ফোকজীবন প্রতিরোধ করে অপ্রতিফলনীয় দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে এবং খোঁজা প্রয়োজন আসলে নারী-পুরুষ বিষয়ে সংস্কৃতি মৌলিক দিক। মৌখিক আঙ্গিকের তুলনায় জেন্ডারের পার্থক্য সূচিত হয় মূলত বস্তুগত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। প্রায়শ ভিন্নতা দেখা যায় নারী এবং পুরুষের জোকস্, গল্প এবং গান গাওয়ার সময়, টেক্সের জেন্ডারের বস্তুগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, নারী এবং পুরুষ মৌখিক জেনারে পরিবেশনা লক্ষ করি অথবা মৌখিক জ্ঞানের উপস্থাপনা থাকে , জেন্ডারে বিভাজন প্রতি মনোযোগ দিয়ে তারা এই পরিবেশনা চলতে থাকে। যাহোক, শারীরিক প্রমাণ পরীক্ষার ভিতর দিয়ে জেন্ডারের বিষয়াদি যেটি আসলে সাংস্কৃতিক তৈরি নয়, যেমন ক্রমাগত কাঠ কাটা অথবা আচ্ছাদিত হওয়া, প্রায়শ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে জেন্ডার বিষয় আলোচনা উপযোগিতা, সমালোচনা এবং অধিকার নিয়ে। অতএব, বস্তুবাদী রীতি বজায় রাখে জেন্ডারের অবস্থা এবং বৈশিষ্ট্য বেশিভাগ সময়।

এটা প্রায় অসম্ভব আমেরিকার ফোকলোর এবং ফোকজীবনকে ,এটার আঙ্গিক, ক্রিয়াশীলতা অথবা অর্থপুর্ণতা দিয়ে , যদি না এর ভিতর জেন্ডারের ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। আমেরিকার ফোকলোরের উৎপাদন, চর্চা এবং প্রবাহের বৈচিত্র্য জেন্ডারভিত্তিক। গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিগতভাবে চর্চা হয় এবং প্রবাহিত জেন্ডারের ধারণা, যেটি কিনা সাংস্কৃতিকভাবে নির্মিত ধারণা এবং মৌখিকভাবে চর্চিত আদর্শও বটে। উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষিতে বিশেষভাবে জেন্ডার বিষয়টি ভিত্তিগত এবং সম্ভাব্য এবং অপ্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো বিশ শতক জুড়ে সর্বত্র বিরাজ করছিল। ফোকলোরের আঙ্গিকগুলো প্রায় সময়ই ঐতিহ্যগত জেন্ডারের সীমানাকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। আমেরিকার জেন্ডার বিষয় ফোকলোর চর্চা ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে - জেন্ডারের গবেষণায় বিনির্মাণের ধারণা ভিতর দিয়ে এবং নারী-পুরুষের নতুন পরিচয় এবং সত্তার ধারণা নির্মাণের ভিতর দিয়ে।


রূপান্তর: জাফর জয়নাল, ফোকলোরবিদ, বাংলাদেশ
লেখক- মনিকা লোটন,  প্রভাষক, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় , এবং লিওনার্দ্য নরম্যান প্রিমিয়ানো, প্রফেসর, ধর্ম বিভাগ ,ক্যাবরিনি কলেজ

Post a Comment

1 Comments