দাগ
সময়ের সুতা কেটে গেলে আমিও একদিন হয়ে যাবো আড়াল, আর উঠবোই না অথচ
তুমি চৈতন্য ফেরাবে বলে ডেকে যাবে সমুহ কাল !
ঘন গম্ভীর অন্ধকারের মতো তোমাকে দিয়ে যাবো শোকের চাদর!
অভাব জোস্নায় তারাদের জলন্ত আকাশ দেখে দেখে খুঁজে যাবে অবিকল, সে রাতেও চিনবে না, তুলনাহীন কোন অনুভূতি জেগে উঠবে তোমার মনের বেদনায়, আবার দেখা হবে এরকম অসাধারণ বিশ্বাস নিয়ে ফের
তারপর আমি ফিরলেও সেদিন আর চিনতে পারবে না সত্যি তুমি জেনে রাখোনি গত জন্মের গোপন দাগ!
তুমি তো কখনো আমার হৃদয় দেখোনি!
অপেক্ষা
বহুদিন ধরে আমাকে দাড় করিয়ে রেখেছিলে, দেখা হবে তুমি আসবে অথবা আমি যাবো তোমার ইশারায়
এর মধ্যে কতবার চাদ তার পক্ষকাল হারালো, শীত শেষে গ্রীস্ম, বর্ষা এলো, তবুও তোমার হাতছানি নেই মামলি এক সরি বলেই সবকিছু বদলে দিতে চাইলে
সেই কবে কোনদিন শেষবার তোমাকে দেখা, যেন সহস্র বছর আমি সুর্যের আবর্তনের সাথে ক্যালেন্ডারের প্রতিটি লাল কালো অক্ষর অতিক্রম করতে করতে তোমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম...
মায়াবতী চোখ, শুভশ্রী নক্ষত্রের মতো কালো সবগুলো তীল, গোছানো চুলের নিখুঁত বন্ধন থেকে কোমল শুভ্র হাতের নিবিড় স্পর্শ পর্যন্ত! আমি বহদিন মুখস্থ মনে যাযাবর অপেক্ষায়! তবুও কী তুমি আসবেই না বলো?
যাযাবর
মানুষের পা থাকলে পথ থাকবে, পথ থাকলেই যে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য থাকবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই,
কত পথ, কত বাক, অলি-গলি, বন্দর লোকালয় পেড়িয়ে—কত মানুষ অমিমাংসিত আশ্রয়হীন!
মহাকালের বিপন্ন অভিযাত্রায়
এক পৃথিবী বয়স হেঁটে যায়—
যে ভূমিহীন তার পৃথিবী থাকে না নিজের!
প্রিয়তমার প্রতি
অদৃশ্য করোনা পৃথিবীকে সমূলে দখলে নিয়েছে, আমরা বৈশ্বিক এক স্লোগান ধারণ করে বলছি-
'ঘরে আছি ঘরে থাকুন'
জানা নেই কতদিন আমরা ঘরে থাকবো
কতদিন লগ ডাউন, সমাজিক দুরত্ব মেনে
মুখ ঢেকে মুখোশ পড়বো।
কতদিন হাওরে যাবো না বলো
কতদিন ফুল পাখি সবুজ মাঠ দেখবো না
মন চাইলেও তোমাকে বলতে পারবো না
প্রিয়তমা মায়াকানন এসো।
বিগত বিস্ময় আর বিতর্কের জন্মদিয়ে সেই তো কতদিন আগে এসেছিলে-
তখন পথে পথে পরিবহন ছিল, নগর কোলাহল
কারখানা চলছিল, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম পড়া বালক বালিকারা জলে ফোটা পদ্মের মতো ফুটেছিল।
সে কবে থেকে নিভে আছে রেঁস্তরা, পাড়ার
চটপটির টং ঘরটিও এখনো দেয়াল ঘেষে নির্বিকার
ঘরে ফিরে গেছে যে যার
ফেরারি আসামীর মতো
পালায়ন পর মানুষের মতো
জেলখানার কয়েদির মতো
খাঁচায় বন্দী পাখীর মতো
একুরিয়ামের মাছের মতো
চিরিয়াখানার জন্তুর মতো ছটফট!
সমগ্র শহর জুড়েই দুর্গত শিবির
এম্বুলেন্সের মুমূর্ষু কান্না–
বিষন্ন বারান্দায়, করুণ জানালায়
মুক্তির উপহাস!
কোথাও কেউ নেই
জনঅরণ্য আজ মৃত্যুভয়ারণ্য
আর্তনাদে চাপা পড়ে গ্যাছে মুক্ত পৃথিবী
কালো ছায়ার মতো উহানের অচলায়তন ছড়িয়ে গ্যাছে প্যারিস, রোম, নিউইয়র্ক সবকটা হিমাদ্রি শহর আফ্রিকা কিংবা আমাজন এন্ট্রাটিকা অথবা সাগর সাহারা অতিক্রম করে নভোচারী পর্যন্ত ছুয়েছে
করোনা মিশাইলের চেও ক্ষীপ্র গতীতে দুনিয়ার সমগ্রই এখন যুগপৎ ছোঁয়াছে!
হাতে হাতে জীবনু ঘাতক
থেমে গ্যাছে স্পর্শ
অবিশ্বাস দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের
বন্ধনের মানবিক হাত।
দুরত্ব মেনে গুরুত্বহীন গোপন অভিসার, হারাবার বেদনার ভারী বাতাস! আকাশ মাটির মতো ব্যবদান উঠেছে বোহেমিয়ান পৃথিবীর জ্যোৎস্না তারা।
প্রিয়তমা, আজ আমরা
মাঠে নেই, ঘাটে নেই,
পথে নেই, শিক্ষালয়-বেশ্যালয়
পান কিংবা ধর্মশালা
অফিস, উদ্যান
লোকসভা–শোক সভা
শপিং, সিনেমা
থিয়েটার, অপেরা, কফিশপ
রাজপথ বিরান কারফিউ!
আমাদের সীমাবদ্ধতার কাছে আমরা নতজানু
জলে ডোবা নুনের মতো ক্রমাগত গলে যাচ্ছি,
শামুকের মতো গুটিয়ে রেখেছি কপাট।
আলিঙ্গন নিরপেক্ষ বিপন্নতাই যেনো
আমাদের একমাত্র বেঁচে যাওয়ার পথ।
বলতে পারো, কবে পৃথিবী সবুজ হবে
জরা জয় করে আবার মানুষ দাঁড়াবে?
ছেড়ে যাচ্ছি
তোমার শহর ছেড়ে যাচ্ছি
এইসব গলি পথ, রাস্তার চেনা মোড়
চায়ের স্টল, ফুটপাত, বৃষ্টি বিস্তীর্ণ লাজুক সন্ধ্যা প্রিয়তমা সিগারেট হাতেও কোথাও
আর দাঁড়াতে দেখবে না!
ছলনার অাবরণ উঠিয়ে যে যার মতো
খোলসে খোলসে মুখ ও মুখোশ
ভেবে নিও আমিই অমানুষ!
এই ভুল পথ ভুলে যাবো,
ভুলে যাবো রঙিন আলো
রাতভর কাঠখানার স্তব্ধ ভাঙা
কল করাতের আওয়াজ!
অন্য জীবন, অন্য পথ ধরে হেঁটে যাবো
অন্য প্রজাপতি ফুল প্রকৃতি দেখতে দেখতে
মলিন হৃদয়ের আয়নায় ভেসে আসা
ভুলে যাবো হিজাব মুখ!
মহিনী বাতাসে সেইসব বিরহী গান গাইতে গাইতে!
ভালোবাসার সবুজ সংকটে পৃথিবী একদিন অবশ হবেই, মায়াবতী তোমারও একদিন করুণ আর্তনাদে হাফর ভাঙবে এতো প্রেম অবহেলার!
অভিশপ্ত প্রেমিক তোমার
আমি আজন্ম যাযাবর!
বেদূইন চলে যাবো দূরে...
কোন দিন আর ফিরবো না!
0 Comments