আলোকাটা ভোর
মায়াবী চোখের পাতায়-অসভ্যতার খয়েরী চিহৃ-শুনতে চাই জলের জলে আঁকা জ্যোৎস্নার মুখোশী আহবান। রাতে যারা জেলে রহস্য মেখে রূপালী আলোয় কেড়ে খায় শ্রমিকের নিঃশব্দের উচাটন গন্ধী শরীর, তাদের বলি-আঙুল মারাত্মক স্বপ্নের স্বদেশ...
ভোর হতে না হতেই-পুকুরের জলে শীতকালীন ঠিক বলছি কিনা বুঝতেছি না! বাচ্চাটা গভীর মনযোগে বাবাকে দেখে-ভোরের আলো হতে চাই-আলোর অদৃশ্যতা রক্তে কেউ কখনো কখনো বিস্মৃত করে তোলে...নদীর কিনারায় আলোর বিষিœতা নেই- অনিন্দিতাকে বলেছি কাল আসিস-আমরা রাস্তায় আলো ছড়াব আর কুত্তাগো দিয়া ইয়ে...
অসুখ কি?? সারাদিন বৃষ্টি...
বোবা মেয়েটি আমার বোন আছিল
বোবা মেয়েটি আমার বোন আছিল-পরিচয়টা হাওয়াই হাওয়াই-মেটেপাত্রে শ্বাস রেখে প্রাণ ছেঁড়েছিল দিগন্তের আঁধারে-ক্রমশ নীল হয়ে যাচ্ছে সপ্তর্ষীর মেঘ-আমিও মেঘের বুকে রেখে হাত জন্মদিব মাস্টার দা সূর্যসেন...রাতটা আজও আমার দ্বারে আসে ধর্মযাজকের মত ছায়াপুরুষ হয়ে...মাঠের পর মাঠ- বোন ঘুমায় রাজ্যের মহামারি বুকের ঘুঘু করে -হাঁটুরে বাবার পকেটে থাকে কষ্টে জমানো লাল ফিতা।
আগুন এক ধূর্ত ম্যাজিক্যাল চোখ-প্লাবনে ক্ষত অনুরাধাদের যৌনবোধের বালিশে মাথা তুলে বুকের সুন্দরে করে দেয় ধানশালিকের বাসা। হাই অনুরাধা হাই প্রফুল্লতা-অনর্থক বেঁচে থাকা মায়াহীন সম্পর্কে পিছুটি কুচক্রী পতঙ্গমায়ায়...
বিদ্রোহী গুরুদাস
ধানের বিস্তৃত মাঠ-কৃষকের মুখে মলিনতা। শরীরের প্রতিটি ঘামের ফোটা রক্ত হয়ে ঝরে...
কৃষক আজ বাঁচার লড়াইয়ে-রাত ভর কেঁদে মরে। কোথায় ঠিকানা...রোদজলা মাঠ। বিদ্রোহী-নিঃশ্বাসে নিরব স্বপ্ন ভাঙ্গনে তুমুল হতাশা। আগুনে জন্ম যে চাষা, বলিষ্ঠ বুকের পাঁটা- এক এক করে মিলে যায় মাঠের আঁকাবাঁকা বিরান ভূমিতে...বাবা বৈভবী তালুকদার। ধানের গন্ধ বুকে চেপে তোমারই মতো কোন চাষা তুলেছে কি জলের দেহে মাঝির নবীনতম ঘুম। অন্ধকারে দিব্যি বলতে পারতে-সমীর উদ্দিন ও শিবরাম মাঝির দু’চোখে নদীর জলের স্বচ্ছ ব্যাকুলতা। রানীসংকল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর কৃষক জীবনের সরলতা ভেঙ্গে মনে জাগে বিশ্বাস, ঠোঁটের কোণে স্বজাতির লাগানো গাছের জীবন্ত পাতা আর হাজার শোষিতের সাহস প্রকম্পিত করে গোধূলির নিরব ছায়া। বালক বয়স আউশ ধান কিংবা আমনের কালে ইঁদুরের উৎপাতে দু’খানা ধুতি, একখানা গেঞ্জি, পাঞ্জাবি আর শীতকালীন চাদরে মোটা কমরেড সরলবিশ্বাসে খরিদ করেছে সাহস। মৃতের কঙ্কাল বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছো কি- না বলা জলধির সলিল সৈকতে...
রোদ্রের বুকচিরে বিছিয়ে দিয়েছো আত্মার সাথে আত্মার বারুদীয় তুফান। রোগশয্যায় তুমি কমরেড জোহাক আলীকে ভাঙা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বলেছিলে- ‘সমাজতন্ত্র দেখে যেতে পারবো তো হে’। রোদ ছুঁয়ে দিলে ধানের শরীর-পুরাতন আলপথ আবারো তেভাগার আগুন হবে। জ¦লবে আগুন ঘরে ঘরে...সুতোকাটা ঘুড়ির লাটাই কৃষক মাঠের কিনারে রেখে-শিখে নিয়েছে গুরুদাসের বিদ্রোহী দাবী আদায়ের সোনালী চোখে সমুদ্র ভাঙার কৌশলী দুঃসাহস।
বুদ্ধ-প্রদীপ
বিষন্ন রোদ তোমার মুখের কাছে জ্বেলে রাখে দিনকালীন সূর্য । শৈশব হতেই তুমি নিজের অজান্তে স্রােতস্বিনী জলে স্নান করিয়ে বৈরাগ্যের বসন পরিয়েছ তোমার মুখস্ত সংসারে। সহসানারী আর রাহুল তোমার জীবনের অট্টহাসি কিংবা জ্ঞানটুকু লুফিয়ে নিয়ে হারিয়ে যাবে দূরের কোন গাঁয়ে-সেই ভয়ে তুমি- ভালোবাসার ঘরে কপাট এটে-ইডিয়ট এক অন্ধ মূর্খ সেজে বসে গেলে বটবৃক্ষের তলে...
সরীসৃপ তোমার শরীর জড়িয়ে মুখের কাছে মুখ রেখে বেয়াকুপের ডুগডুগি বাজায় আর তুমি শয্যাসঙ্গীনীকে পাঠ্যগ্রন্থের মত দূরে রেখে রাতজোছনার পিঁপড়ে হয়ে উঠে যাও বৃক্ষের শাখে-নদী বেয়ে আসে প্রিয়মুখী উড়াবতী মেয়ে-সেও জানে দেনাদারীহাসি-তবু তুমি-নিভুনিভু আগুনে জ্বালালে প্রদীপ-যা ছড়িয়ে গেল-দেশ হতে দেশান্তরে-গ্রহ হতে গ্রহান্তরে...
ক্রাচে হাঁটে বাংলাদেশ
ছুঁড়ে দিলাম দ্রোহের প্রতীক তোমার চোখে- রাত্রির গাভীনে রাখা ফাঁসি কাষ্ঠের রক্তাক্ত শায়ান...বিরানভূমিতে তুমি ফলাতে চেয়েছিলে শস্যের জন্মগত আভা। দুঃখরা ডানামেলে বারংবার তোমার হৃদয় খোঁড়লে গড়ে- চৈতালী স্মৃতির উত্তরাধিকার মাটিয়ালি স্বাদ... নির্বাণের মকশফ করে তোমার গ্রামের পথে রাখা বিষাদী পোড়ামানুষের চিহৃ আর শৈশবের আত্মবিদ্রোহের অন্তর্মুখি নদীভাঙ্গনে ক্ষুর্ধাত মানুষের রক্তাক্তদেহ...কি করে মানুষ পারে আলোকে ফেলে নৌকায় ভাসাতে নদীকালীন কষ্ট। বটবৃক্ষের তলে বাউলের কণ্ঠে মানুষের ঘরহারানো কিংবা পটুয়ার হাতে লোকায়ত বাংলায় তোমার হেডসম্বলিত লালক্যাপ...
রোদালু আঙ্গুল চেপে ধরে শকুন হননের সান্ধকালীন পূর্ণিমা। আজও তুমি দূর্বাসকালে শিশিরের জুতা পায়ে হেঁটে যাও গ্রাম হতে গ্রামে... এগারো কলমীলতায় জড়ানো বৈঠকীগানের আসরে। তোমার লাল লাল সুরে বলে যাওয়া সাম্যের বাণী স্মৃতিহীন নই তবু উন্মুক্ত করে একজাতীর ইতিহাস। কর্ণেল দেখো এখনো হাজার হাজার কর্ণেল পা হারা তোমার প্রতিরুপ...বাম পা হারিয়ে ক্রাচে ভর করে হাঁটে বাংলাদেশ...
0 Comments