অন্তর্গত জীবনের উপলব্ধিতে কবি মানুষের সংকটের অবস্থা বুঝে নেন সবার আগে।আবিষ্কার করেন চাকা মূলত মানুষের মাথাগুলোর ছদ্মনাম।
তাই নির্দ্বিধায় কবি বলে দেন শহরের আগুন মুছে গিয়ে কখনো বৃষ্টি হবে না ফুলের। তবু স্বচ্ছ আগামীর প্রত্যাশায় কবি হেঁটে চলেন ভস্মীভূত শহরের ভবিষ্যতের দিকে....
আবু ইমরানের কবিতা পড়ুন সময়ের অঙ্গীকার নামায়....
ভস্মীভূত ভবিষ্যৎ
_______________________
আমি বিশ্বাস করিনা শহরের আগুন মুছে যাবে
একদিন বৃষ্টি হবে ফুলের, বিশ্বাস হয়না আমার।
পরিষ্কার বিকেলের মতো স্বচ্ছ আগামী চেয়ে আছে চোখ বরাবর
পুড়ে যাচ্ছে সব, কেউ শিখিয়ে দেয়নি ভবিষ্যৎ দ্যাখার সূত্র।
ভস্মীভূত শহর পকেটে পুরে আমি হেঁটে চলেছি ভবিষ্যতে।
জোছনাস্নাত বিবর
__________________
বাটখারা অন্ধকার বুকে চেপে নেমে আসা জ্যোৎস্না
আতর ছড়ায় উদোম জমিতে
ডাহুক রাত চোখ বুজে গোনে অপেক্ষার প্রহর। প্রহরী দু'চোখ নোনাজলে হাতড়ায় পেছন কিংবা আর যা কিছু অচ্ছুত।
সামনে দেখতে গেলে লালচোখ কারারক্ষী জানায়,
'এন্ট্রি রেসট্রিকটেড'।
অন্ধকার বুকে জ্যোৎস্না ছিটায় বহুগামী জমির ওপর
অবাধ চলনে ব্যারিকেড শুধু মানুষের ঘর
ভাঙা মন্দির, পোড়ো বাড়িটা।
চোখের সমাহার আটকে রাখে শোভন সময়
মানুষ ভুল করে মানুষকে মানুষ ভেবে।
জাতপাতহীন জ্যোৎস্না বারংবার এড়িয়ে যায় সব;
বাটখারা অন্ধকার বুকে চেপে নেমে আসা জ্যোৎস্না
আতর ছড়ায় উদোম জমিতে।
"শহরের আগুন মুছে যাবে
একদিন বৃষ্টি হবে ফুলের, বিশ্বাস হয়না আমার"
নৈমিত্তিক আত্মগোপন
____________________
ঘাম চুপচুপে শহর থেমে আছে চাকার উপর।
চাকা মূলত মাথাগুলোর প্রকাশিত ছদ্মনাম।
প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পথ ভুলে
পানশালায় ঘুমিয়ে পড়ে যে নির্বোধ মেধাবীরা -
পরিচিত মুখ দেখে ভুলে যায় বাড়ি ফেরার কথা,
নিজের গভীরে আস্ত প্রাসাদ ফেলে -
নেশাগ্রস্ত আঁধারিতে ঘুমিয়ে পড়ে পরিচিত বুকে।
নগরে বিমূর্ত ঘ্রাণ
_______________
তোমার ছায়ার গন্ধ ঠোঁটে নিয়ে যে শিশির ম'রে যায়
ঘাসের শিথানে প্রতিটি নতুন ভোরে - সে আমার চেনা।
অথচ তোমার নির্মল ছবি দেখিনি কখনো।
এই উঁচু শহরেও আছো তুমি - যেমন চিরকাল ছিলে
সিন্ধুর তোরণ থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার শীতাচ্ছন্ন বরফে।
এইখানে - এখানে খুঁজে পায়নি তোমাকে গোঁয়ার সমাজ,
বারবার যারা পথে ম'রে থাকে বেঘোরে -
তাদের বাসী মাংসের ঘ্রাণ অচ্ছুৎ চিরকাল
এদের চোখে; তোমাকে বারবার পেয়ে হারিয়ে শাঁখ-আজানে খোঁজে - নেশাগ্রস্ত চোখ।
অম্লান অভিমানে তোমার আত্মগোপন গোপনীয় এই ধূলিধূসর শহরে।
রোদ ভেজা ভাদরে অবোধ সমাজ তোমাকে বসাতে চায় গীর্জার ঘন্টায়।
প্রতিটি ধর্ষণ শেষে মাংসাশী মন তোমাতে আশ্রয় খোঁজে;
প্রতিটি মৃত্যুর পর তোমার দিকে গালাগাল ছোড়ে যে মূর্খ মগজ
আজ ভোরে শুদ্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি সে বেমালুম ভুলে গ্যাছে।
কিশোরীর যোনি ছেঁড়া কান্না বাতাসের কানে যখন পাতলা হয়ে আসে -
তখন কোথায় ঘুমাও তুমি?
ঘুণেধরা মৃত বেহালার কান্নার শব্দ প্রতিনিয়ত খাবি খায় - এখানে দুর্গন্ধ গলিতে।
পূর্ব-পশ্চিম ঘুরে বেহায়া মগজ তোমাকে দ্যাখেনি চেয়ে
রোদ ভেজা ভাদরে, সিক্ত ফুটপাতে - কেমন ঘুমায়
তোমার মুক্ত শরীর, রিক্ত আত্মা।
"ঈশ্বরের বোকা খাতায় আমার ডাকনাম দুটো নেই"
অহেতুক অভিমান
________________
নখ ছিঁড়ে গ্যাছে, এবার পোকায় ধরেছে চিবুক।
স্বার্থক শকুন টেনে ধরে আছে সলজ্জ আঁচল।
তবু তোমার ভেজা চোখ কেউ দেখলোনা বলে
মুখ জুড়ে উজ্জ্বল অন্ধকার সাজিয়ে নির্বিকার বসে আছো।
প্রিয়ন্তি, তোমার বুকের জ্বলজ্বলে ঘামের গন্ধ আমি চিনি।
প্রিয়ন্তি, আমি জানি তোমার দুঃখবোধের ছন্দ।
অথচ তোমার ভেজা চোখ কেউ দেখলোনা বলে
মুখ জুড়ে উজ্জ্বল অন্ধকার সাজিয়ে -
কেমন নির্বিকার বসে আছো!
নিভৃত মনের কাফন
__________________
হাতের রেখায় এক বাগান লুকিয়ে কিভাবে ঘুমাও প্রিয়?
আমার ডাকনাম দিয়েছিলে ফুল।
কাঁপা ঠোঁটে ছুঁয়ে দ্যাখার অনুমতি দাওনি কর্ষিত জমি
অথচ অজান্তে ছুঁয়ে গেছি কতোটা - চোখ বুজে ঠিক পেয়েছো টের, জানি।
আমার নামে এক জনপদ উজাড় হওয়ার ভয়ে
তুমি আজো যেমন সতর্ক থাকো তোমার অন্তর্বাসের মতো
তেমনি নিভৃতে টেনেছি মনের কাফন তোমার অগোচরে।
হাতের তালুতে এক সাগর লুকিয়ে এতোটা নির্বিকার কিভাবে ঘুমাও প্রিয়?
আমার ডাকনাম দিয়েছিলে জল।
অপ্রাপ্য আস্ফালনে নির্বাক কুন্ঠিত ছিলাম নিজের গভীরতা নিয়ে।
তোমার চোখের তারা যেমন লুকোতে পারে নভোমন্ডল
আমি ততোটাই বেরসিক চেয়ে থাকি আকাশে।
ডুবে মরেনা সবাই;
ঈশ্বরের বোকা খাতায় আমার ডাকনাম দুটো নেই।
0 Comments