ঈদ সংখ্যার কবিতাগুচ্ছ-২০১৯


 

মায়িশা তাসনিম ইসলাম এর কবিতা
চোখচক্র

দেখা হয়ে গিয়েছিলো, দোদুল্যমান অপ্রত্যাশায়
তৃতীয় ও চতুর্থ চোখের সাথে, বেমানান পর্দায়।
তাদের শরীরে ছিলো নীল কাজলের লেয়ার
এবং রেশমীপোকার বিষণ্ণ দাঁতের কামড়।

দাঁড়িয়ে ছিলাম মিছিলের পেছনের অনিশ্চিত  দরজায়
ফায়ার এক্সিট দিয়ে নেমে গেলাম সমুদ্রনিশির কল্পনায় !
সব শব্দই সমুদ্রে লালবাতি জ্বালানোর মতো দুঃসংবাদ
যেভাবে মানুষ পায়ের আঙুলগুলো জুতোর কবলে পড়ে হা করে থাকে।

তৃতীয় ও চতুর্থ চোখ আমাকে বলে উঠলো
গ্রীকদেবীর শরীরের মতোই আকর্ষণীয় একটি মিথ; কিংবা মিথ্যা!
"তুমি কাজল ছাড়াও সুন্দর"
প্রথম ও দ্বিতীয় চোখ খোঁজা শুরু করলো আত্মঘাতী প্রসাধনী।

অতলান্তে

পাঁজর গলে গলে যে অন্ধকারের সাতপাক
একাকীত্ব পুড়িয়ে তোকে ছাই বানানো দ্বিধাহীন।
ভস্ম হতে যদি অনুদিত রয় গন্ধরাজের প্রথম ওড়না
বুঝে নিবো অমর পুষ্পেরা শুধু সপ্তম ব্যাংকের ডিপোজিট।

আদিত্য আনামের কবিতা
অশ্লীল জুতোজোড়া

অর্ধেক শরীর চলে শরীরের ভারে,
অর্ধেক মন কাঁপে অযাচিত ভয়ে।
দেয়ালে তুলির রঙ রঙচটা স্বরে
চৈত্রের খোড়াকি নিয়ে সারাদেহে ফেরে।
গোপনে রাঙানো সব কর্ণফুলী কথা
বুকে ধরে বেঁচে থাকে হলুদ চিঠি।
মাতাল পিয়ন ভোলে প্রেয়সীর পথ
বিপথে গমন করে ভুল ঠিকানায়।

যুগলবন্দী

তুমি-আমি যুগলবন্দী
মফস্বলের খাঁচায়!
ছয় দেয়ালে নয় খেয়ালে
খুব সচেতন বাঁচায়।

কাঠগোলাপের স্বপ্নগুলো
কর্পোরেটের টবে
রোপন করে জপতে থাকি
শ্রাবণ কি আর হবে?

হয়না শ্রাবণ সয়না শ্রাবণ
শ্রাবণ নাকি বারণ!
রঙচটে যায় শাড়ির আঁচল
আঁচলভরা তারণ।

আঁকড়ে ধরা ঘটি-বাটি
আউলা ঝরের হাওয়ায়
উড়তে গিয়ে পা ভেঙে যায়
ঘোড়ারোগের ধাওয়ায়।

ডিমলাইটে সন্ধ্যা নামে
আঁকতে থাকি খসড়া
ডিপোজিটের সুখগুলো হয়
মফস্বলের পসরা।


জান্নাতুল মাওয়া সুরভীর কবিতা
নরক

শাদা শঙ্খচিলের ডানায় বিষন্ন নীল আত্মহত্যা ; ঝটপট ঝটপট ডানা ঝাপ্ টায়।
এ্যালকোহলিক সাব-কনশাস মাইন্ডে নরক দ্যাখা যায় ;দেখতে চেয়েছি বলে।
ওখানের দক্ষিণ কোণে দেবদারু গাছটা ; সবুজপাতা সমেত।
ওই গাছের নিচে লুসিফারের রেড ওয়াইন পার্টিতে আবার দ্যাখা হোক আমাদের ; প্রার্থনা থাকলো।
তুমি আমায় চিনবে?-না থাক।
তোমার কন্ঠে এক্সকিউজ মি শুনতে শুনতে আরেক পেগ চালান করে দেয়া যায়।
তারপর শান্ত সিসিরাস নদী তীরে বসে আমরা চুমু খাবো ; আহা ভয় পেয়ো না।
নরকে তো আত্মহত্যা নিষিদ্ধ নয়.....!


দৃষ্টিকোণ

আমি খুলে দিয়েছিলাম বুকের বোতাম ;
বলেছিলাম দেখে নাও সব।
যা আছে আজো অজানা,
গহীনে লুকানো কিছু
প্রেম,শিল্পকলা আর স্তন।
অথচ তুমি দেখলে আগের জন্মের দাগ ;
দেখলে পূর্বের আঁচড়ের দগদগে ঘা বুক জুড়ে।
তুমিও প্রচলিত মিথের বাইরে যেতে পারলেনা!
আমিও লাগিয়ে দিলাম বোতাম
আর বললাম তবে চলি কেমন?!


মারুফ আহমেদ নয়ন
ও পপি ফুল
 
জলে ভিজে যাচ্ছে রৌদ্র দগ্ধ পপি ফুলের গান, লিরিক গুলো হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সারের ডানার মতো, যেনো মেঘের পিয়ানো বেজে উঠছে মার্টেল বনে, ঝুড়ি ভরে তুলে আনা সমস্ত ফলের ভেতরে বিষ, সমস্ত মধু ও মদের বোতলে খেলা করছে মৃত্যু, মুখের ভেতরে অঙ্কিত হচ্ছে তোমার চাঁদ মুখ, মানুষেরা আমাকে দেখতে এসে তোমার কথা বলছে, যেনো সার্কাসের সঙ, আমার ভ্রম হচ্ছে, ডুকে পড়ছি পিপুলের বনে, মনে পড়ছে, অরণ্যের জিহ্বার মতো এতো দীর্ঘ ও সবুজ পৃথিবী আর কোথাও নেই.

ইবনে শামস এর কবিতা
ফরেস্ট একাডেমির বিষণ্ণবিকালগুলো


চোখের সমুদ্দুরে ভাসিতেছে গোটা ফরেস্ট একাডেমি



ষোলশহর জংশনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের হুইসেল শুনলেই কেমন হু হু করে উঠে আত্মা; মনে হয়- একটা বিষাদগ্রস্ত ফরেস্ট একাডেমি ডাকিতেছে আমায়।


ফরেস্ট একাডেমির ভিতরে গাছের গুড়ার মতো উড়িতেছে স্মৃতি।  হেঁটে হেঁটে দীর্ঘ পথ খুঁজেছি হলুদ ফুল ফুটে আছে কোন সে বিষাদের বৃক্ষে আর কোন পাতাতে লিখা হয়েছে আমাদের পরিণতি?

আমার বুকের ভিতর ছোট হয়ে আসা এই ফরেস্ট একাডেমি আর কিইবা লিখে দিতে পারে মিথ্যা সন্ধ্যার গল্প ছাড়া?


ফরেস্ট একাডেমির ভিতর ঘুমিয়ে পড়েছে কতোগুলো গাছ এমন ভাতদুপুরে- গুনে গুনে পেট ভরে ঘুম নামিতেছে আমারও চোখে; শুধু কেউ ডাকেনি ঘুমের নিমন্ত্রণে৷


আসমানে উঠে যাওয়া সড়ক ধরে উঠে গেছি ফরেস্ট একাডেমির শেষ বিকেলে-

চিত্রনাট্য হাতে ঘুমাইয়া যাইতেছে ইশা সাহেব।
ধ্রুবর হাতে খেলিতেছিলো ক্যমরা কিংবা চোখের ভিতর গদার ঘুমায়ে পড়িতেছে বছরের শেষ শীতের লোভে।
এমাজের হলুদ পাঞ্জাবিতে ভিজে যাচ্ছে নায়িকার দৃষ্টি
হামেদ ফিরতে পারেনি ভার্সিটির শেষ ট্রেন মিস করে হৃৎপিণ্ড হাতে ঘুরিতেছে অমরাবতীর বেলকনি জুড়ে।
সৈকত; আমাদের নায়কের সুদিন ফিরিতেছিলো; বুটজুতো জোড়া ধরে ঝুলিতেছিলো ফিতেদের সংসার৷ চোখে চোখে
মরিতেছিলো সৌমিত্রের হাসি।

পুরো ফরেস্ট একাডেমির হাহাকার বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে সবাই তবু আত্মা রয়ে গেছি গাছেদের ভিড়ে।  একা উঠছি

অক্ষর প্রবালের  কবিতা
 বুনট নীতি

বিচ্ছিন্ন সমুদ্র মাদকতায় উড়ে গেছে নেশাতুর ঠোঁট
তাই পথ হারিয়ে পা খুঁজে নেয় জুতোর গভীরতা।
পথ কখনো বোঝে না ক্ষুধার গৌরচন্দ্রিকা-
শুয়ে থাকে ঘাসের কানঘেঁষে বিমূর্ত পথচারীর পা'য়।
আবেগ অতি আঁঠালো কিসিমে’র ছাই
গুটি হয়ে জমে যায় আঁটুলির ন্যায়।
সঞ্চিত দুঃখ তবু খুঁজে ফেরে ঠোঁটের আয়ুরেখা।
যার গোড়ায় লুকিয়ে আছে আয়ুর্বেদি প্রেম।
কিন্তু জানে না-
মাছ বিনিময়ের দুপুরে এদেশে মাছের গন্ধ- 'হারাম'।

নি- লাম যোগ্য দুঃখ

বিস্মৃতি জমা পড়ে আছে খাটের উপরে
চুলে তার মেরুনি শোক।
দৃশ্যের পর দৃশ্য তারপর একরাশ আঁধার হেঁটে যায় চোখে।
আমি দৃশ্য হতে চাই নি
দৃশ্যের আড়ালে হয়ে গেছি ডানাহীন পাখি।
পাখিদের চোখে সমুদ্র থাকে না-
থাকে শুধু মন্থন ক্ষোভ।

বিচলিত ঢেউ তবু আছড়ে পড়ছে অতীতে।
এখান থেকে অতীত অনেক দূর-
দুপুর গড়িয়ে গেলে মন থেকে বাস ছেড়ে যায়।
দুঃখ নিলামে তোলে
আর কারবারি খাতায় সৈন্যদলের মতো জড় হয় নিলামের দরদাম।

আনিকা ইবনাত
জেব্রাক্রসিং

ঠোঁটের কিনারে ঘুমিয়ে পড়েছে
সোনালী বিকেল...
রাত্রির সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি কখন!!
শ্মশানের দোরে কড়া নেড়েছি কখন!!
শৈশবের মুখরতা ভুলে
কখন নেমেছি ভুল স্টেশনে...
চুড়ির শব্দে শুন্যতা বাজে কেন?
আলতায় জ্বলে অধৈর্য্য বিদ্রূপ....
হৃদয়ের বাসে কোন কন্ডাক্টর নেই,,
আমিও রাখিনি সতর্ক মনোযোগ।
তুমিও বাজাওনি সিটি....
সতর্ক করোনি...
ভেঙ্গে তো যাবেই আজ
সব জেব্রাক্রসিং....
লাল- নীল- সবুজ- হলুদ....
বাতিরা নিভে তো যাবেই।

যাহিদ সুবহান
রুপের ছুড়ি কিংবা বারণিতার হাসি

শালী,ছিনাল মাগী!
আকাশটার মাঝে তো ঝুলে থাকিস
মাঝবয়সী প্রেমিকার স্তনের মতো
বুকটার মধ্য তো সুতাকাটা ঘুড়ির বাস
অষ্টাদশীর হাসি দিয়ে হৃদয়টাকে
কেন  তবে করে যাস ছিন্নভিন্ন ?
প্রতি পূর্ণিমায় আমার জানালায় এসে
খুন করে যাস তোর রুপের ছুড়ি দিয়ে!


সাকিব শাকিলের কবিতা
সমস্ত রাত বসে আছে

সমস্ত রাত বসে আছে চোখে
মনের ভারে নুয়ে পরেছে পা
গহীন বিছানায় কবিতার ক্ষিদে
হাতের স্পর্শে ভীত ছায়ারা কাঁপে মৃতের গেলাসে।
আয় চারু,
আজ তোকে পেলে বৃষ্টি নামাবো শ্রাবণের শেষ মাসে।

মৌসুমি হাওয়ার অসুখ

বিদগ্ধ দুপুরে পাখিদের দুঃখী ডানায়
মৃত্যুর মতো ওম।
কোন ভেলা ভালবেসে বেহুলারা ঘর ছাড়ে
নিমগ্ন জলে;
কোমলগন্ধ কার স্নেহের চাদরে ঝরে যায় অসুখী মৌরিফুল ;
অসময়ে বাড়ে মৌসুমি হাওয়ার অসুখ।

বাঁশবাগানের মাথার উপর একাকী দাড়কাক
কাজলাদিদি আজ ঘরে নেই।

হিমাদ্রী চৌধুরী
 প্রণয়ত্রাস

বিবর্ণ রাতের ক্যানভাসে ছাপা হতো
বর্ষণ বৃত্তান্ত, জলের গ্লাসেই জলোচ্ছ্বাস
উঠলে আমি হাত বাড়াতাম ইলেকট্রিকের ঠান্ডা যন্ত্রে — শীতল ধোঁয়ায় মগজ ধোলাই
তবুও আঙুল হিসেব রাখতো ক'রাত গ্যালো

সময় হলে প্রসব করে পোয়াতি রাত
দিনের আলোয় দল মেলে দেয় তীব্র আঁধার
ঘুম তাড়ানোর শর্তে যখন তুমিই আসো
রক্তমাখা স্মৃতি আমায় দেয় অভিশাপ

মন-মন্দিরে কাসার ঘন্টা, শাঁখের উলুয়
ছড়িয়ে পড়ে রক্ত-সিঁদুর, ধূপের ধোঁয়া
কৃত্তিনাশার ভাঙন যেমন সর্বগ্রাসী
সুখ গুলো সব বাড়ন্ত হয় প্রণয়ত্রাসে।


ঈশ্বর ও আমি
সুহান কবির

বিষণ্ণতার দরজায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ সন্ধ্যারাত'
নিজ থেকে সরে যাচ্ছে একটি আকাশ।
পৃথিবীতে পা রাখার দু-মিনিট আগে খেয়ে এসেছি ফ্লুটোর দু'টো চোখ!

তারপর পা রাখতেই পৃথিবীতে জানতে পারলাম এখানে গোলাপ চাষ হয়-
সেখান থেকে একটি গোলাপ ছিঁড়ে হাঁটতে লাগলাম আপন মনে।
অতঃপর গোলাপ ছেঁড়ার অপরাধে আমায় আর পৃথিবীতে বেশিদিন থাকতে দিলেন না আমার ঈশ্বর।

দরজায় করাঘাত "নোবেলপ্রাপ্ত আসামি"এ্যাশট্রের জীবন - এসব নিয়েই ফিরে এলাম আমি আপনার কাছে মাননীয় ঈশ্বর;এছাড়া আমার দেবার মতো কিছুই নেই আপনাকে!

ধন্যবাদ নরক জীবন
ধন্যবাদ মানুষেরা
ধন্যবাদ আমার ঈশ্বর
ধন্যবাদ মৃত পৃথিবী।



Post a Comment

2 Comments